বিবস্ত্র লাশ উদ্ধারের পাঁচ মাস পর মিলল তরুণীর পরিচয়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমিনরহাট
প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ২৭ এপ্রিল ২০২১

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সেই তরুণীর লাশের ৫ মাস পর পরিচয় মিলেছে। প্রেম ঘটিত কারণে পূর্ব পরিকল্পনায় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলা থেকে সুকৌশলে ওই তরুণীকে ডেকে এনে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় লালমনিরহাটের বি- সার্কেলের এএসপি তাপস সরকার পাটগ্রাম থানায় সাংবাদিকদের এসব ঘটনার বর্ণনা দেন।

হত্যার মোটিভসহ পুরো কাহিনী উদ্ধার এবং প্রায় ৫ মাস পর ধর্ষক ট্রাকচালক মো. জিরাব আলী (২৮) ও তার ভাতিজা শাহিনুর ইসলাম শাহিনকে (১৫) গ্রেফতারের কথাও জানান তিনি।

গ্রেফতার ট্রাকচালক মো. জিরাব আলী শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা গ্রামের ০৪ নং ওয়ার্ডের কুবেদ আলীর ছেলে ও ভাতিজা শাহিনুর ইসলাম শাহিন ওই ওয়ার্ডের জিলামুদ্দিন ছেলে। গ্রেফতারের পর জিরাব আলীকে লালমনিরহাট জেলহাজতে এবং ভাতিজা শাহিনুর ইসলাম শাহিনকে যশোর শিশু শোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যার কাজে ব্যবহারকৃত ট্রাকটিও জব্দ করে ত্রিশাল থেকে লালমনিরহাটে আনার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত হামিদা আক্তার (২৪) ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ভরডোবা গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে।

জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ট্রাকচালক মো. জিরাব আলীর (২৮) প্রেমে পড়েন একই এলাকার এক তরুণী। নিজ এলাকায় সেই তরুণীর নাম হামিদা আক্তার এবং কোথাও সুরমা আবার কোথাও নন্দিনী নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। আগের দুই স্ত্রী ও একাধিক সন্তান থাকায় জিরাব আলী হামিদাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।

তবুও তরুণীর অব্যাহত বিয়ের চাপ সামলাতে না পেরে প্রেমিকা হামিদাকে অন্য কোথাও নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন জিরাব আলী। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছর ১ ডিসেম্বর ত্রিশাল থেকে রংপুরে আসতে বলা হয় ওই তরুণীকে। ট্রাকচালক ও তার ভাতিজা আগের দিন আসেন রংপুরে। তারও ১৫ দিন আগে থেকে তরুণীকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন জিরাব আলী।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের কথা বলে রংপুরে আসতে বলা হয় তরুণীকে। ওইদিন বিকেলে রংপুরের দেয়া ঠিকানায় চলে আসেন সেই তরুণী। এরপর খাওয়া দাওয়া করে ট্রাকে উঠে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন ট্রাকচালক, ভাতিজা ও হামিদা। পথিমধ্যে বড়খাতা বাউরা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরির পর চাচা-ভাতিজা কোনো এক সময় গণধর্ষণ করেন তরুণীকে।

পরে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ট্রাকে থাকা রড দিয়ে তরুণীর মাথায় সজোরে আঘাত করেন ট্রাকচালক। এতে তরুণীর মৃত্যু নিশ্চিত হলে বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে পালিয়ে যান চাচা-ভাতিজা।

এরপর পাটগ্রাম থানার জোংড়া ইউনিয়নের মমিনপুর আলাউদ্দিন নগর নির্জন এলাকায় মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক তরুণীর লাশ দেখে ২ ডিসেম্বর সকালে পুলিশকে খবর দেন জনগণ। উদ্ধারকৃত রক্তাক্ত বিবস্ত্র লাশের পোস্টমর্টেম শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। সেদিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ।

২ ডিসেম্বর দায়েরকৃত সেই ক্লু লেস মামলার মোটিভ উদ্ধারে প্রযুক্তি ব্যবহারের পর প্রথমে বাউরা জমগ্রাম থেকে একজন লোক জানান, এক মেয়ে ও দু'জন পুরুষ লোককে বাউরা বাজারে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এরপর আদিতমারী থেকে আরও একজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনদিন আগে গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পাটগ্রাম থানা পুলিশের বিশেষ টিম তরুণীর করুণ মৃত্যুর কাহিনী উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, প্রায় ৫ মাস ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাকচালক ও তার ভাতিজাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।

রবিউল হাসান/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।