উপকূলীয় নদীর পানিতে মলের জীবাণু, ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া
নদী ও খালের পানিতে মলের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সমীক্ষায় এ তথ্য জানা গেছে।
আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধি দল উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া রোগীর তালিকা ধরে সমীক্ষা করে।
তথ্যানুযায়ী, সমীক্ষাভুক্ত এলাকায় মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িতে গভীর নলকূপ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বরগুনাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় স্থানের খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে পরীক্ষার পর খালের পানিতে মলের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ২০ রোগীর মল পরীক্ষায় তিনজনের মলে কলেরা ও ইকোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়ার বিষয়টি সমীক্ষায় প্রকাশ পায়।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে। যার মধ্যে খাওয়ার ও গৃহস্থালি কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো, খাল-নদীর পানি ফুটিয়ে অথবা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে নিরাপদ করে ব্যবহার ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা উল্লেখযোগ্য।
আইইডিসিআরের প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘এরই মধ্যে আইইডিসিআরের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি।’
এদিকে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআরের ছয় সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপকূলীয় জেলা-উপজেলা পরিদর্শন করে। এ সময় তারা রোগীদের মল, বিভিন্ন উৎসের পানির নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করে।
আইইডিসিআরের তিনজন রোগতত্ত্ববিদ (চিকিৎসক) ও তিনজন কারিগরি সহায়ক প্রতিনিধি দলের রয়েছেন। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন রোগতত্ত্ববিদ জাহিদুর রহমান।
প্রতিনিধি দলের সদস্য রোগতত্ত্ববিদ সুব্রত মালাকার বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ।’
দলের অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের একটি নেতিবাচক প্রবণতা হলো দৈনন্দিন কাজে খালের পানি ব্যবহার করা। বিশেষ করে সকালে ভাতের সঙ্গে খালের পানি মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তীব্র গরমের কারণে পানি বাহিত এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, বুধবার (২১ এপ্রিল) ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় আরও এক হাজার ৫২৪ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৬৮। তবে গত ২৩ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৬২২ জন। আর গত সাতদিনে আক্রান্ত হয়েছে আট হাজার ৭৭৯ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগে দুই সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আটজনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ২৭।
তারা আরও বলছেন, হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ ডেটা তৈরির কাজ চলছে। এ জন্য জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে।
ঝালকাঠি স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, তীব্র গরমে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে জেলায় প্রায় তিন হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় দুই হাজার। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়েও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে আক্রান্ত অনেককে।
সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী জানান, বর্তমানে পর্যাপ্ত স্যালাইন থাকায় রোগীদের চিকিৎসায় বেগ পেতে হচ্ছে না। তবে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
একদিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি অপরদিকে ডায়রিয়া রোগী, সবমিলিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এএইচ/এমএসএইচ