‘অবহেলায়’ প্রসূতির মৃত্যু : স্বজনদের হামলায় ডাক্তার-নার্সসহ আহত ৭
চিকিৎসার অবহেলায় দিনা বেগম (৩০) নামর এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। এতে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সসহ সাতজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত দিনা বেগম তালা উপজেলার হাজরাকাটি গ্রামের মো. সাহাবুদ্দিন সরদারের স্ত্রী।
প্রসূতির স্বামী সাহাবুদ্দিন সরদার জানান, নারী ও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সন্তান সম্ভবা স্ত্রী দিনার মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার তারিখ ছিল। ভোরে দিনার প্রসব বেদনা শুরু হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখা হয়। হাসপাতালের নার্সদের কয়েক দফা অনুরোধ করলেও ডাক্তার পরে আসবে বলে জানায়।
তিনি আরও জানান, বিকেল ৪টার দিকে প্রসূতির অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে নার্সরা তড়িঘড়ি কর্তব্যরত চিকিৎসককে ডেকে আনেন। ডাক্তার এসে প্রসূতিকে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তার শরীরে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করা হলেও প্রসূতি অজ্ঞান হয়নি। পরে তাকে আরও একটি চেতনানাশক ইনজেকশন দেয়া হয়। এ সময় প্রসূতি অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে সিজার না করে প্রসূতিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। খুলনায় নেয়ার পথে রোগীর মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রসূতি দিনার স্বজনরা হাসপাতালে হামলা চালায়। এ সময় তারা জরুরি বিভাগের ডা. অতুল ঘোষ ও ডা. ফারহা ফেরদৌসকে মারধর করেন। কর্তব্যরত নার্সরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করেন। বাকিদের নাম জানা যায়নি।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অতনু বলেন, ‘প্রসূতি দিনা বেগম হার্টের রোগী ছিলেন। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অথচ রোগীর স্বজনরা অহেতুক আমাদের লাঞ্ছিত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোগীর চিকিৎসায় আমাদের আন্তরিকতার কমতি ছিল না। রোগীকে যখন খুলনা প্রেরণ করা হয় সঙ্গে ওটি সহকারী রহমতকেও পাঠানো হয়েছিল। মূলত দীর্ঘ বছর পর হাসপাতালে ওটি বিভাগ চালু করায় ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হতে শুরু করে। তারাই মিথ্যা প্রচার ও উস্কানি দিয়ে হাসপাতালে হামলার ঘটনা ও অপপ্রচার চালিয়েছে।’
এ বিষয়ে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজিব সরদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রসূতির স্বজনরা ডাক্তার ও নার্সদের ওপর চড়াও হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ঘটনার সময় কতজন আহত হয়েছে তা জানি না। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আহসানুর রহমান রাজীব/এসজে/এমকেএইচ