নড়াইলে খাবার পানির সংকট, হাহাকার মানুষের
অনাবৃষ্টির কারণে নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকটের কারণে রীতিমত হাহাকার শুরু হয়েছে। রোজা ও করোনাকালে পানির জন্য অনেকের ভোগান্তি বেড়েছে। এছাড়াও বোরো ধানে সেচ দিতেও কৃষকরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিকল্প পন্থায় পানি উত্তোলনের চেষ্টা করছেন কৃষকরা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুসারে, এ বছর নড়াইলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ থাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর এলাকাভেদে ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বৃষ্টি হলেই এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর জানিয়েছে।
জানা যায়, নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম, হবখালী, মাইজপাড়া, শাহাবাদ, চন্ডিবরপুর, আউড়িয়া, তুলারামপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এবং লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, নোয়াগ্রাম, নলদী, লাহুড়িয়া, শালনগর, জয়পুর, লোহাগড়া, ইতনা, কোটাকোল এবং কালিয়া উপজেলার উঁচু এলাকায় টিউবওয়েল দিয়ে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে নদী ও খালের আশপাশের এলাকায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই নদী/খাল থেকে পানি তুলে ব্যবহার করছে। অধিকাংশ পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। আর কিছু কিছু পুকুরে সামান্য পানি থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ গ্রামের শিক্ষক এস এম ফকরুল আলম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কমপক্ষে ৩০টি টিউবওয়েলে গত দুই মাস ধরে পানি উঠছে না। গ্রামের চারটি মসজিদে মুসল্লিরা ওজু করার জন্য পানি পাচ্ছেন না। অনেকেই নদীতে গিয়ে গোসল করছেন। নদী থেকে পানি এনে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে কেউ কেউ বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে পাইপ বসিয়ে কোনো রকম খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। গ্রামের কয়েকটি টিউবওয়েলে তারা পাইপ বসালেও সেখানে লাইন দিয়ে পানি নিতে হচ্ছে। এই করোনার সময় এভাবে পানি সংগ্রহ করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।
নলদী ইউনিয়নের নওয়াপাড়া, গোপালপুর, কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা, নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের হান্দলা, কোটাকোল ইউনিয়নের ভাটপাড়া, লাহুড়িয়া, নড়াইল সদরের চালিতাতলা, ফেদী গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় চৈত্র মাস থেকে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বর্ষার পর থেকে আর বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে।
বিভিন্ন এলাকায় বিকল্প হিসেবে তারা পাইপ বসিয়ে কিছুটা পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে। তবে সেসব টিউবওয়েল থেকে পানি নেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়েই এসব টিউবওয়েলে মানুষ পানি নেয়ার জন্য লাইন দিচ্ছে। এছাড়াও রোজায় পানির সংকটে ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।
এদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার বোরো চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। গত এক মাসের অধিক সময়ে উঁচু এলাকার বোরো চাষিরা ধানে ঠিকমত পানি দিতে পারছেন না। অনেকেই বিকল্প হিসেবে নদী ও খাল থেকে পানি দেয়ার চেষ্টা করছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এম আবু সালেহ বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি বেশি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় টিউবওয়েলে পানি পাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি হলে আশা করা যায়, এ সমস্যা কেটে যাবে। আমরা জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে সার্ভিস ওয়াটার অর্থাৎ নদী ও খালের পানি এবং বৃষ্টির পানি ব্যবহারের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নড়াইলের চিত্রা ও নবগঙ্গা নদীর পানির ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে গবেষণা চলছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) নড়াইলের সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. রকিবুল হোসেন বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে বোরো চাষ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। সেজন্য নদী ও খালের পানি দিয়ে সেচকাজ চালানোর জন্য কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিএডিসির অধীনে নড়াইলে ২১টি পাওয়ার পাম্পের আওতায় ৪৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এসব জমিতে পানি সেচের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি। কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করলে নদী বা খালের পানি দিয়ে সেচ প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রে বিএডিসি সহযোগিতা করবে।
হাফিজুল নিলু/এআরএ/এমএস