বঙ্গোপসাগরের সম্ভাব্য মজুত গ্যাস দিয়ে চাহিদা মেটানো যাবে ১০০ বছর

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৮:২৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বঙ্গোপসাগরের তলদেশে তিন হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোনাজাইট, জিরকন, রুটাইল, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ফসফরাস, সালফেট ও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টসহ মূল্যবান খনিজ পদার্থের ভান্ডার পাওয়া গেছে। সাগরের তলদেশে পাওয়া গেছে সম্ভাব্য ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত, যা দিয়ে দেশের ১০০ বছরের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বর্তমানে দেশে মাত্র ১৪ বছরের গ্যাস মজুত রয়েছে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বঙ্গোপসাগরের তলদেশে থাকা বিরল খনিজ সম্পদের ভূতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক সেমিনারে আলোচকরা বলেন, দেশের সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে শুধু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেই হবে না, সেই প্রযুক্তিকে মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে। তবেই উপকৃত হবে জাতি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, সমুদ্রে প্রায় ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল। অথচ গড়ে ৩০ নটিক্যাল পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করতে পারছি। অধিকন্তু বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর ৪০ মিটারের কম গভীরতায় মাছ ধরার অনুমতি না থাকলেও তারা তা মানছে না। গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা না থাকায় এদেশের জেলেরা উপকূলের কাছকাছি মাছ ধরে। তবে এদেশের জেলেরাও যাতে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে আনতে পারে, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য শ্রীলংকা থেকে কয়েকজন জেলেকে আনা হচ্ছে।

ড. শফিক বলেন, হ্যাচারিতে পোনার খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার আর্টিমিয়া আমদানি করা হয়। অথচ তিন দশক আগেই এদেশের বিজ্ঞানীরা সফলভাবে আর্টিমিয়া তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এদেশের বিজ্ঞানীরা অতীতে অনেক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু সেই প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগানো হয়নি। সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে শুধু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেই হবে না, সেই প্রযুক্তিকে মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে।

gass2

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইতি রাণী পোদ্দার। সেমিনারে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ অর্থবছরের গবেষণা ফলাফলসহ মোট সাতটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে সেন্টমার্টিনের কোরাল দূষণের কারণে সৃষ্ট রাসায়নিক প্রভাব তুলে ধরে কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে নাফনদীতে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে গেলে সেন্টমার্টিনের প্রবালগুলোর ওপর দূষণজনিত চাপ পড়ে। বছরের বাকি সময়ে সেন্টমার্টিনের প্রবালগুলো স্বাস্থ্যবান থাকে।

সেমিনারে বঙ্গোপসাগরের রূপতত্ত্ব তুলে ধরেন ফিজিক্যাল ও স্পেস ওশানোগ্রাফি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রূপক লোধ ও শাহীনুর রহমান। সাগরের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মীর কাশেম ও সুলতান আল নাহিয়ান এবং অপ্রলিত খাদ্য ভান্ডারের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন ওশানোগ্রাফি ডাটা সেন্টারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তানিয়া ইসলাম।

আলোচনায় অংশ নেন পরমাণু শক্তি কমিশনের সৈকত খনিজ বালি আহরণ কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মাসুদ করিম, পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ নাজমুল হুদা, মৎস্য বিশেষজ্ঞ পলাশ খন্দকার, ইকোলাইফের ম্যানেজার মো. আবদুল কাইয়ুম, শিল্পোদোক্তা ওমর হাসান প্রমুখ।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নৌ-বাহিনীর লে. কমান্ডার মাহবুবুর রহমান সিকদার ও কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বিপ্লব।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।