বন্ধ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ত্রাণের অপেক্ষায় কর্মীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, ১৯ এপ্রিল ২০২১

লকডাউনে দেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় ‘খরিদ্দার’ আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় উপার্জন হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় দেড় হাজার যৌনকর্মী।

করোনা সংক্রমণের শুরুতে যৌনকর্মীরা পুলিশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিকবার ত্রাণ সহায়তা পেলেও এবারের লকডাউনে এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে যৌনকর্মীসহ প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষের বসবাস। জৈবিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ পল্লীতে আসা-যাওয়া করেন। ফলে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সর্বাত্মক লকডাউনে পল্লীতে খরিদ্দার আসা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে খরিদ্দার না আসায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন যৌনকর্মী ও পল্লীর বাসিন্দারা। কোনো রকমে ধারদেনা করে চলছে তাদের জীবন জীবিকা এবং পার করছেন অলস সময়।

অপরদিকে পল্লীতে লকডাউন বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে পুলিশ।

যৌনকর্মীরা বলছেন, গতবছরের লকডাউনে তারা পুলিশসহ অনেকের কাছ থেকে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু এবারের লকডাউনে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি। এখন খরিদ্দার না আসাতে হচ্ছে না আয় রোজগারও। সন্তান-সন্ততি নিয়ে ধারদেনা করে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। এভাবে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকারের কাছে ত্রাণ সহায়তার অনুরোধ জানান তারা।

পল্লীর ভেতরের হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেন, পল্লীর মেয়েদের নিয়ে তাদের ব্যবসা। এখন মেয়েরাই ভাত পাচ্ছে না। এবার এখন পর্যন্ত কেউ তাদের সহযোগিতা করেনি। মহাজনদের থেকে বাকি এনে মেয়েদের দিচ্ছেন। কিন্তু কষ্ট সবার হচ্ছে। মেয়েরা কোনো সহযোগিতা পেলে তারাও ভালো থাকতেন।

‘অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন’র নারী নেত্রী ঝুমুর আক্তার বলেন, আগের লকডাউনে পুলিশ ও তাদের মাধ্যমে অনেকে যৌনকর্মীদের সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এবার একটি সংগঠনের মাধ্যমে শুধু ২শ জনের খাবার পেয়েছেন। এখানে যৌনকর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। লকডাউন বাড়লে এখানকার কেউ করোনায় মারা যাবে না। মারা যাবে না খেয়ে।

তিনি বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কত কিছু করছে। আর তারা তো এদেশের নাগরিক। তাই যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে অনুরোধ জানান তিনি।

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সি ও ভাইচ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, করোনার প্রথম পর্যায়ের লকডাউনে যৌনকর্মীদের সর্বোচ্চ সরকারি সহযোগিতা দিয়েছেন। এবারও তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা শেষ হলে তারা সহযোগিতা পাবে। এছাড়া তারাও ব্যক্তিগতভাবে যৌনকর্মীদের জন্য ভাবছেন।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, করোনার শুরুতে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজ হাবিবুর রহমান ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে যৌনকর্মীদের বেশ কয়েকবার ত্রাণ দিয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি সংস্থাও সহযোগিতা করেছে। এবারও অনেকে সহযোগিতা করছেন।

রুবেলুর রহমান/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।