চাঁদপুরে বাড়ছে বাল্যবিয়ে, ভাঙছে সংসার
দারিদ্র্য ও অসচেতনতার কারণে চাঁদপুরে রোধ করা যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে। প্রতি বছরই এ সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবার দারিদ্র্যের কারণেই প্রতি বছরই এদের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। চাঁদপুরে বাল্যবিয়ের পর লিপি, শিরিন ও নার্গিসের মতো আরও অনেকের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। তারা এখন সুখের বদলে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে।
এদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের দফতরসহ কোনো দফতরেই বাল্যবিয়ের কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তারা বাল্যবিয়ে রোধকল্পে অভিযানও অব্যাহত রেখেছেন। জরিমানা করছেন অনেক বর-কনে ও তাদের অভিভাবকদের। রেহাই পাচ্ছে না সহযোগী ইউপি সদস্যসহ কাজীরাও। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিয়ে।
চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের শিরিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, দারিদ্র্য ও অসচেতনতার কারণে ৩ বছর আগে ১২ বছর বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে তাকে। দুর্ভাগ্য বছর না গড়াতেই আবার অভাব ও যৌতুক দিতে না পারায় সংসার ভেঙে যায়। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চাঁদপুর বড় স্টেশন যমুনা রোডে মা-বাবার কাছে আবারও ফিরতে হয়েছে তাকে।
রিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, অভাব অনটনের কারণে ১১ বছর বয়সে তাকেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। কিন্তু স্বামীর সংসারে বেশি দিন থাকতে পারেনি। যৌতুকের কারণে গর্ভাবস্থায় স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়।
রিনার মা কুলসুমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, অভাবের কারণে সুখের জন্য অল্প বয়সেই রিনাকে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সুখ আর হলো না তার।
চাঁদপুর রাজরাজেস্বরের নার্গিস বেগম জাগো নিউজকে বলেন, চার বছর আগে ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল একটু সুখের আশায়। কিন্তু তার স্বামীও এক বাচ্চা রেখে তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। তিনিও জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে এখন।
চাঁদপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিসেস জেবুন্নেছা জাগো নিউজকে বলেন, বাল্যবিয়ের কোনো পরিসংখ্যান নেই জেলায়। তবে আমরা বিয়ের খবর পেলে তা রোধ করার চেষ্টা করি। তারপরও অভাবী ঘরের অভিভাবকরা স্ট্যাম্প করে গোপনে বাল্যবিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অল্প বয়সে বিয়ের কারণে শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয় তাদের। বিশেষ করে গর্ভধারণ করতে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাঁদপুরেও বাল্যবিয়ে রোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক বিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার অনেককে শাস্তিও দেয়া হয়েছে। বাল্যবিয়ের ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে এবং গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ১৯২৯ সাল থেকে সরকারিভাবে বাল্যবিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ। ১৯৮০ সালে বিয়ের নূন্যতম বয়স মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২১ নির্ধারণ করেছে সরকার। ইউনিসেফের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিয়ের হার সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে চতুর্থ। বাংলাদেশের শতকরা ২৯ ভাগ মেয়েরই বিয়ে হয় ১৫ বছরের কম বয়সে। এর মধ্যে শতকরা দুই ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১১ বছরের কম বয়সে।
এসএস/এমএস