বৃদ্ধা হাচেন ভানু জীবিত থেকেও ‘মৃত’, বন্ধ বয়স্ক ভাতা

সাইফ আমীন
সাইফ আমীন সাইফ আমীন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৫ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২১

বরিশালের মুলাদী উপজেলার বিধবা শানু বেগমের মতো ভোটার তালিকা হালনাগাদে মৃত দেখানোর কারণে একই ইউনিয়নের আরেক বৃদ্ধা হাচেন ভানু (৮২) বয়স্ক ভাতাসহ সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি নিজেকে ‘জীবিত’ প্রমাণ করতে গত চারমাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্ত এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে বিধবা হাচেন ভানু অভিযোগ করেছেন।

হাচেন ভানু মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত জলকাদের ফকিরের স্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

বৃদ্ধা হাচেন ভানু জানান, ৩০ বছর আগে পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে তার স্বামী জলকাদের ফকির মারা যান। অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েদের বড় করে বিয়ে দিয়েছেন। দিনমজুর ছেলে যা আয় করে তা দিয়ে ছেলের সংসারই চলে না। সে কারণে ইচ্ছে থাকলেও তাকে আর্থিক সহায়তা করতে পারেন না। ২০০৫ সালে কাজিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার তার অবস্থা দেখে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন। ওই টাকা দিয়ে দুবেলা কোনোমতে তার খাবার জোগাড় হতো।

তিনি জানান, একবছর ধরে তার ভাতার টাকা বন্ধ রয়েছে। কয়েক মাস আগে উপজেলা সমাজসেবা অফিস তার ভাতা প্রদানের বইটি জমা নেয়। পরে জানানো হয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তিনি ‘জীবিত’ এই মর্মে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তার বয়স্ক ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরে তিনি নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নসহ মার্চ মাসের প্রথম দিকে নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের একমাস অতিবাহিত হলেও নির্বাচন অফিস কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

হাচেন ভানু বলেন, ‘আমি মারা যাইনি। নিজে উপজেলা সমাজসেবা অফিস এবং নির্বাচন অফিসে গিয়েছি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বার আমি জীবিত সেই মর্মে প্রত্যয়ন করেছেন। সেই প্রত্যায়নপত্র জমা দিয়েছি। এরপরও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।’

কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মন্টু বিশ্বাস জানান, বিধবা শানু বেগমের মতো একই ঘটনা ঘটেছে বিধবা হাচেন ভানুর ক্ষেত্রে। তিনি জীবিত। দিব্যি চলাফেরা করছেন। আমার কাছে এসে তিনি জীবিত থাকার প্রত্যয়নপত্রও নিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, ‘কয়েকমাস আগে হাচেন ভানু আমার অফিসে এসেছিলেন। তখন ফাইলপত্র ঘেঁটে জানতে পারি ভোটার হালনাগাদ তালিকায় তাকে ‘মৃত’ বলে উল্লেখ করায় তার বয়স্ক ভাতা বন্ধ রয়েছে। তখন হাচেন ভানুকে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেখান থেকে বিষয়টি সংশোধন হলে পুনরায় ভাতা চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তাকে জানানো হয়।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

উপজেলা নির্বাচন অফিসার শওকত আলী জানান, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারী জীবিত হাচেন ভানুকে হয়তো ‘মৃত’ উল্লেখ করেছেন। এ কারণে হালনাগাদ তালিকায় হাচেন ভানুকে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। তার নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে সার্চ করলে হাচেন ভানুকে ‘মৃত’ দেখানো হচ্ছে। এরইমধ্যে বিষয়টি সংশোধনের জন্য হাচেন ভানুর লিখিত আবেদন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে গত এক সপ্তাহ ধরে সরকারি বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন বরিশালের মুলাদী উপজেলার আরেক বিধবা শানু বেগম (৬৫)। ভোটার তালিকা হালনাগাদে তাকে ‌‘মৃত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে বিধবা ভাতার পাশাপাশি সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শানু বেগম। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে ‘জীবিত দেখানোর’ উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সাইফ আমীন/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।