ভারতে পলিথিন পেতে রাত কাটাচ্ছে সাবেক বাংলাদেশিরা


প্রকাশিত: ১২:৫৬ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকার মানুষজন ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেদেশে যাওয়ার পর থেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেখানে (ভারতে) প্রাথমিকভাবে ছোট একটি ঘর তাদের দেয়া হলেও দুজন মানুষের বেশি সেখানে থাকতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া মালামালগুলো তারা এখনো ঘরে তুলতে পারেনি। সেগুলো বাড়ি বাইরে একটি স্থানে স্তুপ রাখা হয়েছে। যেসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুইয়ের অধিক ওই পরিবারের মানুষগুলো বাড়ির বাইরে পলিথিন পেতে রাত যাপন করছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে নীলফামারীর চিলাহাটি চেকপোস্টে ভারতের নবাগত নাগরিক ও বাংলাদেশে বসবাসকারী তাদের স্বজনদের নিয়ে এক মিলন মেলা বসে। সেখানে ভারতের নতুন নাগরিকরা এরকম কষ্টের সঙ্গে দিনযাপন করছে বলে বাংলাদেশি তাদের স্বজনদের জানিয়েছে। এদিন সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে দুদেশের এই নাগরিকরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করা সুযোগ পান।

খুব সকালেই চিলাহাটি সীমান্তে হাজার হাজার জনগণ ও ভারতের অংশে হলদিবাদী সীমান্তে সহস্রাধিক ভারতীয় নাগরিকের পাশাপাশি নবাগত ভারতীয় নাগরিকরাও ছুটে আসেন। মিলন মেলার দিন ধার্য হওয়ার খবর আগেই নির্ধারণ করার কারণে দুদেশের নাগরিকরা আগে থেকেই মোবাইল ফোনে তাদের যাওয়া/আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত করে রাখে স্বজনদের।

Nilfamary

তাই সকালে চিলাহাটি থেকে ডাঙ্গাপাড়া বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত সহস্রাধিক অটোবাইক, সাইকেল ও মোটসাইকেল তীব্র জানজট শুরু হয়। বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা বাশ দিয়ে ব্যারিকেট তৈরি করে বন্ধ করে দেযা হয়।

মিলন মেলায় বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিক যারা ভারতের নতুন নাগরিক হয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, ভালো নেই সেখানে তারা। বাংলাদেশে যে স্বাধীনতা পেয়েছেন সেখানে তারা বন্দি জীবনযাপন করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাবেক বাংলাদেশের নাগরিক জানান, ঘরে জায়গা নেই। বাইরে ফেলে রাখতে হচ্ছে জিনিসপত্র। টিনের তৈরি ঘরে ঠাসাঠাসি থাকলেও ভেতরে চৌকিও নেই। বাধ্য হয়ে পলিথিন পেতে প্রথম শীতের রাত কাটালেন সাবেক বাংলাদেশি নাগরিকগণ।
 
গত মঙ্গলবার প্রথম রাতে সরকারিভাবে পরোটা সুজি দেয়া হয়। শৌচাগারের হালও ভায়াবহ। আশ্রয় কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ লাইন দেয়া থাকলেও নেই জেনারেটরের ব্যবস্থা। বিদ্যুত চলে গেলে অন্ধকারে তাদেরকে থাকতে হচ্ছে। তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশে যে স্বাধীনতা পেয়েছি এখানে এসে বন্দি জীবনযাপন করছি। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর আলোর মুখ দেখার জন্য ভারতে আসলেও কবে আলোর মুখ দেখব বলতে পারছি না।
 
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের ৯৮৯ জন ভারত যেতে চেয়েছিল। দিনহাটা কৃষি মেলা চত্বরে ৭৩টি পরিবারের ৩১২ জন থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে। হলদিবাড়ি কৃষি ফার্ম এলাকায় ৯৮টি পরিবার থাকতে পারবে। বাকিদের জন্য ভোটবাড়ি কৃষি এলাকায় এই অস্থায়ী বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ৪শ বর্গফুটের এক একটি টিনের বাড়ি। প্রতি ২০ জনের জন্য তৈরি করে শৌচাগার, তার অবস্থাও ভয়াবহ। ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে মর্মে তারা অভিযোগ করেছেন। নবাগত ভারতীয় নাগরিকগণ বাংলাদেশের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ বিষয়গুলো বলেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হলদিবাড়ি চেকপোস্টের পূর্বে ৫ কিলোমিটার এলাকার তার কাঁটা জুড়ে উভয় দেশের পরিবারগুলো তারের দুই পাশে দাঁড়িয়ে মতবিনিময় করেন।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।