শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর কেটে দেয়া হলো চুল
পটুয়াখালীর গলাচিপায় মোবাইল চুরির অভিযোগে শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর চুল কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাটির ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয় নির্যাতনকারীরা।
পরে এ ঘটনায় গলাচিপা থানায় মামলা হলে ভিডিওটি মুছে ফেলা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সোহেল মৃধা (৩৮) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে গলাচিপা থানা পুলিশ।
মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলখালী গ্রামের জুয়েল মৃধার মোবাইল চুরির অভিযাগে শুক্রবার সকালে ডাকুয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর গ্রামের মকবুল গাজীর ছেলে রাকিব গাজীকে (১৪) ঘর থেকে ডেকে আনা হয়। পরে ফুলখালী রেজাউল মৃধার বাড়ির সামনে গরু বাঁধার রশি দিয়ে আমগাছে হাত-পা বেঁধে রাকিবকে নির্যাতন করেন ফুলখালী গ্রামের জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধা, এমাদুল মৃধা ও জাকির মৃধাসহ অজ্ঞাত আরও দুই তিনজন। প্রায় তিন ঘণ্টা তারা এ নির্যাতন চালান। নির্যাতনের ভিডিও তারা মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।
এ বিষয়ে ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আরিফ মিয়া বলেন, শিশুটির বাড়ি আমার ওয়ার্ডে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্যকে খবর দিতে বলি। বিষয়টি আইনিভাবে মিমাংসার কথা বলেছিলাম।
নির্যাতনের শিকার শিশু রাকিবের ভাষ্য, ‘আমার ঘর দিয়ে রেজাউল মৃধা ডাইক্কা নেয়। রাস্তায় উঠলে একটা মোবাইল তারা আমার পকেটে ঢুকাইয়া দেয়। এরপর রেজাউল মৃধার বাড়ি নিয়া বলে চোর পাইছি। এ সময় এমাদুল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধাসহ কয়েকজন মিল্লা একটি গরুর দড়ি দিয়া আমারে আমগাছের লগে বাঁইধা বাঁশের লাডি দিয়া পিডাইছে। হেরা লোয়ার (লাহা) রড দিয়া চোখ উডাইয়া দেওয়ার ভয় দেহাইছে।’
নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা মোর্শেদা বগম বলেন, ‘রেজাউল ও জুয়েল মৃধাসহ ৪-৫ জন আমার ছেলে রাকিবকে ঘর থেকে ডাইক্কা নেয়। রেজাউল মৃধার বাড়িতে নিয়ে আমার পোলারে বাঁইধা নির্যাতন করে। এর কিছুক্ষণ পরই আমার স্বামী মকবুল গাজীকে মৃধাবাড়ির জুয়েল মৃধা ও রাকিব মৃধা গলায় গামছা পেঁচিয়ে নিয়ে যায়। বাপ-পোলারে একখানে কইরা পোলার সামনেই নির্যাতন করে এবং আমার পোলা রাকিবের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কাইট্টা দেয়। আমার স্বামীকে উদ্ধার করতে গেলে আমারেও মারধর করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যহন থানায় মামলা করতে যাই তহন আমার বাড়িতে যাইয়া আত্মীয় স্বজনদের কাছে হুমকি দিয়ে আসে। আমি ভয়তে আছি।’
এ বিষয়ে গলাচিপা থানার ওসি এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা ও সোহেল মৃধাকে প্রধান আসামি করে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিনজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এর মধ্যে অভিযুক্ত সোহেল মৃধাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এফএ/এমএস