গরম বাতাসে ময়মনসিংহে আড়াই হাজার হেক্টর ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত
ময়মনসিংহে হঠাৎ গরম বাতাসে প্রায় দুই হাজার ৬৩০ হেক্টর ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে টানা প্রায় চারঘণ্টার বাতাসে ধানের এ ক্ষতি হয় বলে ধারণা করছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিস সুত্র জানায়, এ বছর জেলার দুই লাখ ৬৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ফলনও ভালো হয়েছিল। সম্প্রতি গরম হাওয়ায় জেলার দুই হাজার ৬৩০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে ত্রিশাল উপজেলার একহাজার ৫৮০ হেক্টর, গফরগাঁও ৪০০ হেক্টর, ঈশ্বরগঞ্জ ২০০ হেক্টর এবং গৌরীপুর ১২৫ হেক্টরসহ জেলার ১৩ উপজেলায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানায়, জেলার সদর উপজেলার চর দূর্গাপুর, চর ভবানীপুর, কোনাপাড়া, আনন্দীপুর, সিরতাসহ বিভিন্ন গ্রামের ধান নষ্ট হয়। এছাড়াও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর গোবিন্দপুরে কয়েকশ’ হেক্টর ধান নষ্ট হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় চর গোবিন্দপুরের কৃষক মিরাজ উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘৮০ শতাংশ জমিতে আমি হাইব্রীড ধান চাষ করেছিলাম। গত রোববার সন্ধার সময় গরম বাতাসে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ৮০ শতাংশ জমিতে ৮ মন ধান পাব বলেও মনে হয় না।’
ওই গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, ‘৯০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ৯০ শতাংশ জমিতে যে পরিমাণ ধান পাওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে তিন ভাগের একভাগ ধানও পাব না। প্রতি ১০ শতাংশে জমির মালিককেই দিতে হবে দুই হাজার টাকা। ঋণ করে ধানের আশায় চাষ করেছিলাম। এখন আবার ঋণ করে জমির মালিককে ভর্তুকি দিতে হবে।’
একই এলাকার মো. আক্কাস আলী বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ৫৫ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ধান এমনভাবেই নষ্ট হয়েছে। যা দেখে মনে হয়, পাঁচ মণ ধানও পাব না। এখন খাব কি, ঋণ কোথা থেকে দেব?- তাই ভেবে পাচ্ছি না। যদি সরকার আমারদের দিকে মুখ তুলে তাকাত তাহলে এ যাত্রায় বেঁচে যেতাম।’
এ বিষয়ে কথা গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, ‘রোববার বিকালে থেকে শুরু হওয়া কালবৈশাখীর গরম বাতাসে জমির ধান পুড়ে সাদা হয়ে গেছে। এখন বউ-বাচ্চা নিয়ে মরন ছাড়া উপাই নাই।’
একই গ্রামের আরেক কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, ‘এর আগে গরম বাতাসে এভাবে ধান নষ্ট হওয়ার নজির নাই। ঋণ করে ধান চাষ করে এখন বিপদে আছি। শুধু ঋণের টাকার ব্যবস্থাও যদি সরকার করে দিত তাহলে কিছুটা রক্ষা পেতাম।’
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুর নাহার লিপি বলেন, ‘উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ ২০ হাজার ৬ শ’ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। যা গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। ক্ষক্ষতির বিষয়টি আমাদের উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
জেলার নান্দাইল উপজেলার কৃষক মানিক বলেন, ‘ধারদেনা করে অপরের কিছু জমি চাষ করছিলাম। প্রতি ১০ শতাংশে দুই হাজার টাকা জমির মালিককেই দিতে হবে। এখন জমির মালিককেই কি দেব। পরিবার নিয়ে সারা বছর নিজেই কিভাবে চলব?
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে ঘুরে খোঁজ খবর নিচ্ছি। কোথাও আংশিক কোথাও সম্পূর্ণ রুপে ফসল নষ্ট হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় এমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ‘ক্ষতির কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ দল মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করবেন। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে গরম বাতাসে ধানের রেনুগুলো ঝড়ে পড়েছে। ফ্যাকাসে ধারণ করেছে। অচিরেই ক্ষতির পরিমাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
মঞ্জুরুল ইসলাম/আরএইচ/এএসএম