সোনারগাঁওয়ে আ.লীগের একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা


প্রকাশিত: ০৩:৪০ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা নিয়ে দলীয় সাংসদদের মাঝে দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

তবে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। দীর্ঘ দু’মাস যাবৎ এ নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। কে পাবেন মেয়র হিসাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।  

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের (সোনারগাঁও) সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা পৌর মেয়র সাদেকুর রহমানকে প্রাথমিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন। সাদেকুর রহমান গত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। আর নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু ফজলে রাব্বিকে সমর্থন দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন।

এদিকে বর্তমান পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান আওয়ামী লীগের সমর্থন নিতে সম্প্রতি সোনারগাঁওয়ের পানামা খেলার মাঠে আওয়ামীলীগের ব্যানারে বিশাল জনসভার আয়োজন করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের  সাংসদ শামীম ওসমান। আয়োজিত সভার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান। আর সভার আগে দুপুরে ভুরি ভোজের আয়োজন করা হয়। এতে কয়েক হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।

সাদেকুর রহমান সাদেক বিগত আমলে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হলেও বর্তমান বিএনপি-জামায়াতের অবস্থা শোচনীয় থাকায় তিনি ভোল পাল্টে শামীম ওসমানের আশীর্বাদ নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে মাঠে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন। আর আওয়ামীলীগের আরেকজন প্রার্থী গাজী মজিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয়ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তিনি নিশ্চিতভাবে মনে করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। আর দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী ফজলে রাব্বি নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করে প্রচারণার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের আরেকজন প্রার্থী সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।  

এদিকে বিএনপির কোনো মেয়র প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত মুখ না খুললেও সালাউদ্দীন আহম্মেদের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনিই এবার বিএনপির দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। আর কারো নাম শোনা না গেলেও বিগত সময়ে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়া সালাউদ্দীনই বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন তা তার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, সোনারগাঁও পৌর মেয়র পদে নির্বাচন করতে প্রচারণায় রয়েছেন বিগত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী গাজী মজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বি, বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। তবে প্রচারণায় না থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা।
 
তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এটি ফজলে রাব্বির। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী মুলত শেখ হাসিনা দেবেন। আর ফজলে রাব্বি হলেন সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর ভগ্নিপতি। ফজলে রাব্বিকে সোনারগাঁও আওয়ামী পরিবার বলতে যাদের বুঝায় সেই হাসনাত পরিবারের উত্তরসূরি সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের সাবেক মেয়র মোশারফ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো সমর্থন করবেন।

যদিও মনোনয়ন লড়াইয়ে রয়েছে গাজী মজিবুর রহমান। তবে গাজী মজিবুর রহমান রাজনীতিতে হোঁচট খেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের পদ হারিয়ে। এখন দলের মনোনয়ন চাওয়াটাই দুরূহ হয়ে গেছে তার জন্য। তবে তিনি এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকতে পারবেন। কারণ, তার দলীয় কোনো পদ  নেই। আর সাদেকুর রহমানকে বুড়ো হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। কিন্তু তার অর্থ ও বর্তমান মেয়র হিসেবে সাংসদ শামীম ওসমান ও সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা সমর্থন দিতে পারেন। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে তদবির করতে পারেন।  
 
শামীম ওসমান ওই সমাবেশে সাদেকুর রহমান যে আওয়ামী লীগেরই প্রার্থী তা সুস্পষ্ট করে বলেননি। কিন্তু সেই ধারণা থেকেই প্রচার হয়েছে সাদেকুর রহমানকে প্রার্থী করেছেন যা আদৌ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ওই সমাবেশে উপস্থিত থাকা লোকজন।

তবে এর পেছনের কারণ হিসেবে জানা গেছে, ১৩ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁয়ে স্বরাষ্টমন্ত্রীকে নিয়ে আসেন নজরুল ইসলাম বাবু ও কায়সার হাসনাত। ওই অনুষ্ঠানে শামীম ওসমানকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। যে কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নজরুল ইসলাম বাবুর ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তবে বিরোধ ইতোমধ্যে সাংসদ বাবু ও কায়সার হাসনাতের সঙ্গে মিটে গেছে বলে জানা গেছে। ফলে সাদেকুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না।

আর বিগত সময়ে বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীকে কখনোই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে শামীম ওসমান কাজ করবেন না সেটা অনেকেই জানেন। এছাড়াও বিগত সময়ে বিএনপির লোকজনকে নিয়ে সোনারগাাঁও পৌরসভাকে বানিয়েছেন চার খলিফার পৌরসভা। ইতোমধ্যে মেয়র সাদেকুর রহমানসহ ওই চার খলিফার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন একজন জমির মালিক।

এদিকে শামীম ওসমানকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ে ওই সমাবেশ নিয়েও রয়েছে নানা নাটকীয়তা। শামীম ওসমানকে সোনারগাঁয়ে ওই সমাবেশে নিতে পেছন থেকে কাজ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মাসদাইরে অবস্থিত ফারিহা গার্মন্টেস মালিক মামুন ভুইয়া। মামুন ভুইয়াও সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে কাজ করেছিলেন। কিন্তু সেটা সাদেকুর রহমান আঁচ করতে পেরেই ওই সমাবেশের মঞ্চের ব্যানারে অতিথির তালিকায় নাম রাখা হয়নি মামুন ভুইয়ার। যদিও পরে মামুন ভুইয়াকে মঞ্চে ওঠানো হলেও তাকে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় মামুন ভুইয়াও ক্ষুব্ধ।

তফসিল ঘোষণার পর সাদেকুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে না এমন আশঙ্কায় কিছু বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সাদেকুর রহমান বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। যে দল তাকে বরণ করবে সেই দল থেকে নির্বাচন করবেন এমন কথা চিন্তা ভাবনা করছেন সাদেক।
 
অন্যদিকে, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে সরাসরি এখনো কোনো নেতা মুখ খুলেননি প্রার্থী হিসেবে। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন সালাউদ্দীন আহম্মেদ।

এদিকে সোনারগাঁও পৌরসভার নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন সম্ভাব্য মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা ভোটারদের মন জয় করতে নিজেদের নানাভাবে পরিচিত করে তুলছেন। আর তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা পোস্টার সেঁটে দিয়েছেন।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।