আচমকা গরম বাতাস সর্বনাশ করে দিল হাওরের চাষিদের
সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ দমকা গরম বাতাস। তিন থেকে চার ঘণ্টা স্থায়ী বাতাসে স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয় এক ধরণের আতংক। গভীর রাতে বাতাস কমার পর আতংক কমে গেলেও সকালে উঠে কৃষকদের মাথায় হাত। সূর্য্যের প্রখরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠতি বোরো ফসলের শীষ মরতে শুরু করে। মাঠের পর মাঠ একই অবস্থা।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এতে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার হাওরাঞ্চলে উঠতি বোরো হাইব্রিড জাতের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় কয়েক ঘণ্টাব্যাপী গরম দমকা বাতাসে উঠতি ফসলের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, নেত্রকোনায় এ বছর মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। জেলার হাওরাঞ্চলে মোট ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়। এরমধ্যে হাইব্রিড (হীরা) জাতের ধান ও বিআর ২৯ ধানে ক্ষতি বেশি হয়েছে। হাওরাঞ্চলে হাইব্রিড (হীরা) জাতের ধান মোট ১০ হাজার ৩৩০ হেক্টর ও বিআর ২৯ জাতের ধান প্রায় ৭ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়েছিল।
মদন, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বারহাট্টা, দুর্গাপুর, কলমাকান্দাসহ সব উপজেলা থেকে ধানের ক্ষতির খবর আসছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অফিস। তবে ক্ষতির সঠিক তথ্য এখনও দিতে পারছে না জেলা কৃষি অধিদফতর।
এদিকে শ্রমিক সংকট ও আগাম বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে হাওরের প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন বোরো ধান। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৬৭০ কোটি ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা। পুরো জেলায় এই মৌসুমে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন ধান।
খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার, এরশাদ মিয়া, মনির হোসেন ও রঞ্জিত সরকার বলেন, গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শুধু গরম বাতাস ছিল। কোনো রকম ঝড় বৃষ্টি ছিল না। বাতাসটা অসহ্য মনে হচ্ছিল। সকালে রোদ ওঠার পর হাওরে গিয়ে দেখি থোড় আসা ধান মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। ধান মরে যাচ্ছে। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমাদের সংসার চালাব কী করে? বেশি ফলনের জন্য হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু এখন সর্বনাশ হয়ে গেছে।
একই উপজেলার নগর ইউনিয়নের সগ্রাখাই গ্রামের পিকলু সরকার, আদমপুর গ্রামের মৃদুল সরকার বলেন, বাতাসটি আমরা বুঝতে পারিনি। জীবনেও এমন গরম বাতাস দেখিনি। সকালে উঠে দেখি খেতের ধান মরে গেছে। আমরা কী খেয়ে বাঁচব?
মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হানুল হক জানান, রোববার বিকেল থেকে শুধু বাতাস প্রবাহিত হয়ে। তা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। মাঠের যে ধান খেতগুলোতে থোড় এসেছিল সেগুলোর আজ (সোমবার) সকাল থেকে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। খেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জরিপ করছি, বিশাল হাওরে ক্ষতির বিষয়টি নিরুপণ করতে একটু সময় লাগবে।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, খালিয়াজুরীতে ২১ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান, ৩ হাজার ৪শ হেক্টর ২৯ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। হাইব্রিড এবং ২৯ জাতের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খেতের পর খেত নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা মাঠ পরিদর্শন করছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে বলেন, অতি গরম আবহাওয়ায় এমনটা হয়েছে। ফুল আসা ধান সব চিটা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছে, জরিপ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।
এইচ এম কামাল/এফএ/জিকেএস