হাওরপারের কৃষকের মুখে এখন সোনার ধানের হাসি
বোরো ধানের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার ছোট-বড় ১৩৫টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ও দেশি জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হাইব্রিড বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলার দেখার হাওরপাড়ের ধান কর্তনের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর। কিন্তু এবার দুই লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, জেলায় ৭০ জাতের বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড ৩৭ জাত, উচ্চ ফলনশীন ২৫ জাত ও দেশীয় ৮ জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। কম সময়ে ফলন ভালো হওয়ায় হাইব্রিড ধানের চাষাবাদ বেড়েছে। গত বছর হাইব্রিড ধান চাষাবাদ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৫১০ হেক্টর; এবার চাষ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ২১০ হেক্টর।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী যে বৃষ্টিপাত হবে তার পানি হাওরে ধারণ করার ক্ষমতা হয়েছে। ধান কাটার জন্য রিপার ও হারভেস্টার রয়েছে। এছাড়াও দেশের অন্য অঞ্চল থেকে ধান কাটার শ্রমিক আনার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।
হাওরপারের কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হলেও হাইব্রিড বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি কেদারে ২৫ মণ করে ধান পাওয়া যাচ্ছে। আগাম বন্যার আগেই এই ধান ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে। চাষাবাদের খরচ পাওয়ার পরও লাভোবান হবেন তারা।
তবে কৃষকদের কাছ থেকে সঠিক মূল্যে সরকারি গুদামে ধান ক্রয় করার দাবিও জানান কৃষকরা।
কৃষক আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যখন ধানের চারা রোপণ করেছিলাম তখন থেকে খুব চিন্তায় ছিলাম, ধান ঘরে তুলতে পারব কি না? যদি বন্যা এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেজন্য রাতে ঘুম হত না। কিন্তু সত্যি আজ হাওর পাড়ের সকল কৃষকরা খুশি। ধান কেটে ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।
কৃষক জলিল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছর আমরা সোনার ধান করি কিন্তু ন্যায্যমূল্য পাই না, সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই আমাদেরকে যেন ধানের সঠিক মূল্য দেয়া হয়।
কৃষক তমুজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হাওরের সোনালী ফসল আমাদের গোলায় উঠবে এবং আমরা লাভবান হব।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এবছর হাইব্রিড ধান বেশি চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী যে বৃষ্টিপাত হবে সে পানি হাওরের জমির শোষণ করার ক্ষমতা আছে। ধান কাটার জন্য ১৫৮টি রিপার ও ২৩৭টি হারভেস্টার প্রস্তুত আছে। বলেও জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বোরো ফসল রক্ষা করার জন্য ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ফসল কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্রপাতি রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এই বছর বেশি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অন্য অঞ্চল থেকে শ্রমিক আনা হবে।
এফএ/এমএস