লাশের অপেক্ষায় গ্রামবাসী, কয়েকটি পরিবারে আহাজারি করারও কেউ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ০৯:২৭ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২১

রাজশাহীর কাটাখালী থানার ঘোড়ামারা নামকস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ নিহত ১৭ জনের বাড়িই রংপুরের পীরগঞ্জে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতদের পরিবারসহ গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। তবে কয়েকটি পরিবারে আহাজারি করারও কেউ নেই। এসব পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছেন। শোকে স্তব্ধ গ্রামবাসী রয়েছেন লাশের অপেক্ষায়।

নিহতদের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে (২৬ মার্চ) উপজেলা সদরের রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর কালো রংয়ের হাই-এইস মাইক্রোবাস নিয়ে পীরগঞ্জের কয়েকটি পরিবারের ১৩ জন সদস্য রাজশাহীতে বেড়ানোর উদ্দেশে রওনা দেন। মাইক্রোবাসটি জুমার নামাজের পর রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে সড়কের ডান পাশ (ভুল পথ) দিয়ে চলতে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোতে থাকা সবাই দগ্ধ হয়ে মারা যান। শুধু প্রাণে বেঁচে যান চালক হানিফ মিয়া। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফুল মিয়া, মেকার ভুট্টু এবং সালাউদ্দিনের পরিবারের সব সদস্যই নিহত হওয়ায় পরিবারের আর কেউই আহাজারি করার জন্য বেঁচে নেই। নিহত পরিবারের কর্তারা সবাই কর্মক্ষম এবং ব্যবসায়ী ছিলেন। নিহত পরিবারগুলোর মধ্যে ফুল মিয়ার বৃদ্ধা মা ফইমনন্নেছা এবং মোকলেছারের একমাত্র মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মোহনা বাড়িতে থাকায় বেঁচে গেছেন।

jagonews24

বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে মোহনা এখন বাকরুদ্ধ। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে মানুষদেরকে দেখছে। কান্নাও ভুলে গেছে মোহনা

চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান বলেন, ‘সালাউদ্দিন বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুরবাড়ি রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামে থাকতেন। দুর্ঘটনায় তার পরিবারের সবার মত্যৃর সংবাদে গ্রামজুড়ে শোকের মাতম শুরু হয়েছে।’

রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘এক দুর্ঘটনায় এতগুলো মানুষের মৃত্যু এর আগে এখানে কখনো হয়নি। এই শোক সহ্য করা খুব কষ্টের। শুনেছি আগুনে পুড়ে গেছে তাদের লাশ। তবুও শেষবারের মতো দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’

রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘এতগুলো লাশের শোক আমি কী বলে শান্তনা দেব! শোক জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি।’

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, ‘ড্রাইভার হানিফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের লাশ দ্রুত পীরগঞ্জে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

jagonews24

রাজশাহীর কাটাখালী থানার সিসিটিভির ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায়, পীরগঞ্জের মাইক্রোবাসটি সড়কের ডান পাশ (ভুল পথে) চলছিল। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। এসময় পাশে থাকা একটি লেগুনাতেও আগুন ধরে যায়।

ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যান। পরে মাইক্রোবাস থেকে আরও ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। শুধুমাত্র মাইক্রোচালক হানিফ মিয়া প্রাণে বেঁচে যান।

জিতু কবীর/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।