যমুনায় জেগে ওঠা চরে বালু বিক্রির মহোৎসব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, ২৬ মার্চ ২০২১

অডিও শুনুন

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠা চর ও ফসলি জমি কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন আর বিক্রির মহোৎসব শুরু চলেছে। উপজেলা প্রশাসন বার বার অভিযান পরিচালনা করলেও এখনো বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। একইসঙ্গে শতশত বালুবাহী ট্রাক চলাচলে স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ বিভিন্ন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার মানুষের।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কুকাদাইর-জিগাতলা এলাকার যমুনা নদীর অংশে গেলে দেখা যা, জেগে ওঠা চর কেটে ট্রাকে ভর্তি করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালুর পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে রীতিমত।

নিকরাইল ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সেতুর কোলঘেঁষে সারপলশিয়া, সিরাজকান্দী- নেংড়া বাজার, মাটিকাটা, চিতুলিয়াপাড়াসহ ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের আট কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টেও চলছে বেপরোয়া বালু বিক্রি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রবীণ ব্যক্তির অভিযোগ, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী খোকা সরকারি দলের প্রভাবশালী লোক, তার ভাই সরকার দলের চেয়ারম্যান। এর প্রভাবে এক যুগের বেশি সময় ধরে শীত ও বর্ষা সব ঋতুতেই বাংলা ড্রেজার আর মাটিকাটার মেশিন ভেক্যু বসিয়ে দিন-রাত হাজার হাজার ট্রাক বালু বিক্রি করে আসছেন তিনি।

তাদের অভিযোগ, এ বালু উত্তোলন নিয়ে বেশি সমালোচনা শুরু হলে প্রশাসন হঠাৎ হঠাৎ লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু একদিনের জন্যও এই অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করতে পারেননি প্রশাসন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নম্বরবিহীন অবৈধ বালুবাহী ড্রামট্রাকগুলোর অতিরিক্ত ওজনের জন্য চলাচলের ফলে গ্রামের ভেতর দিয়ে তৈরি সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধুলাবালিতে চারপাশ অন্ধকার হয়ে থাকে। গাছ ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বাতাসে উড়া বালু মানুষের চোখ-মুখে গিয়ে ঠান্ডাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এত ক্ষতি হলেও এর প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

jagonews24

জিগাতলা কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিরা জানান, বালু মাটির ট্রাক গ্রামের ভেতর দিয়ে এসে ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে ওঠে। ঘাটে ট্রাক প্রবেশের মোড়েই মসজিদটি অবস্থিত। ট্রাকের ধুলাবালির কারণে মসজিদে নামাজ পড়া কষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া বেপরোয়া ট্রাক চলাচল করায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাকুদাইর ও জিগাতলা বালুর ঘাট ব্যবসায়ী খোকা বলেন, ‘আমি আমার নিজ জমির বালু কেটে বিক্রি করছি। তাই বালু বিক্রি করতে কারও অনুমতি প্রয়োজন আছে আমি মনে করি না।’

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, ‘এ উপজেলার যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে চর ও ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব অবৈধ বালুর ঘাটে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। এরপরও যদি কোনটা চলমান থাকে তাহলে সেটি বন্ধেরও উদ্যোগ নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘আজও আমরা চারজন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে জেল জরিমানা করেছি। সাধারণত যারা প্রভাবশালী তারা ঘটনাস্থলে থাকেন না। আর ঘটনাস্থলে না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না।

আরিফ উর রহমান টগর/এসজে/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।