আবাদি জমি গিলছে ইটভাটা
পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠছে। আর এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। এসব ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদির জমির ‘টপ সোয়েল’ (মাটির উপরিভাগ)। এতে করে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি।
গাংনী উপজেলায় ৪০ ইটভাটা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ইটভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৭-৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। চড়া দাম পেতে জমির মালিক মাটির ওপরের অংশ (এক থেকে দেড়ফুট) বিক্রি করে দেন। এতে করে ফসলি জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। বিশেষ করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ছাড়াও বাঁশের মোথা ব্যবহারের ফলে বাঁশঝাড় উজাড় হচ্ছে।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ এর ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, আবাদি জমিতে কোনো ইটভাটা তৈরি করা যাবে না ও ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করতে হবে। কাঠ পোড়ানো যাবে না। অথচ সব ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করেন না। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতিবছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরি করছেন।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষিজমি। কোথাও কোথাও শুধু জমির উপরিভাগ কেটে নেয়া হচ্ছে। ট্রলি করে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। অতিরিক্ত মাটি বহনের ফলে বিভিন্ন রাস্তা দেবে গেছে। ভেঙে গেছে অনেক রাস্তা।
ধুলাবালি ও ইটভাটার কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ায় চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রিয়াজুল আলম জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইড, সালফার-ডাই অক্সাইড, হাইড্রোকার্বনসহ নানা ধরনের বিপজ্জনক বিষাক্ত গ্যাস ছাড়াও ধুলা ও ভাসমান ছাইয়ের ব্যাপক বিস্তার ঘটায়। এতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং কার্বনের নানা যৌগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। এতে করে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাও বেড়ে যায়। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি এবং ফুসফুসের নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান।
গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আতু বললেন, উপজেলার কোনো ইটভাটারই সনদ নেই। তারপরও ইটের প্রয়োজনীয় এবং ব্যবসার খাতিরে ইটভাটা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিভিন্নভাবে প্রশাসনকেও ম্যানেজ করতে হয়।
মাঝে মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান চলে ও জরিমানা করে বলেও স্বীকার করেন তিনি। পাশাপাশি ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া এবং তা পরিবহনের কারণে রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন এই ইটভাটা মালিক।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম শাহাবুদ্দীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, জমির ‘টপ সোয়েল’ ইটভাটায় ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে উৎপাদন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জমির টপ সোয়েল কাটা বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, আবাদি জমির ‘টপ সোয়েল’ ইটভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইতোমধ্যে সব ইটভাটা মালিককে ‘টপ সোয়েল’ কাটা ও মাটি পরিবহনের ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারপরও কেউ এ চিঠি অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আসিফ ইকবাল/এসআর/জেআইএম