ধর্ষণচেষ্টার মামলা করে বাড়িছাড়া গৃহবধূ, সমাজচ্যুত পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০৯:১৬ এএম, ২৩ মার্চ ২০২১

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক গৃহবধূকে (২৭) ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় মামলা করায় ভুক্তভোগী পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। এখানেই শেষ নয়, শেষ পর্যন্ত অব্যাহত হুমকির মুখে ওই গৃহবধূ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা জানান, তার মেয়ে মামলা করায় সমাজপতিরা দুই সপ্তাহ আগে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে। ছোট বাচ্চাদের মাদরাসা এবং তাকে মসজিদে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘আমার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কেফায়েত উল্যাহর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি কেফায়েত উল্যাহকে গ্রেফতার করে চরজব্বর থানা পুলিশ। কেফায়েত গ্রেফতার হওয়ার পর সমাজপতি মো. এমরাত সওদাগর, মো. সোলেমান তার পক্ষ নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে বৈঠক করেন। তারপর তারা আদালত থেকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। তা না হলে আমি এলাকায় থাকতে পারব না বলে সিদ্ধান্ত দেন। বাধ্য হয়ে আমি এখন দুই সন্তান নিয়ে বাড়ি ছেড়েছি।’

ভুক্তভোগী গৃহবধূ আরও জানান, গত বছরের ৮ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে মো. বাহার (৪০) ও কেফায়েত উল্যাহ (৪৫) তার ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা তাকে কিল ঘুষি মারলে তার একটি দাঁত ভেঙে যায়। এ ঘটনায় তিনি নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২এ গত ১০ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি বলেন, ওই মামলার পর আসামি কেফায়েত উল্যাহর স্ত্রী বাদী হয়ে তার পরিবারের ৪ জন সদস্যের বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট একই আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে পাল্টা মামলা করেন।

গৃহবধূর মামলার আইনজীবী খালেদ মো. সাইফ উদ্দিন কামরুল জানান, ওই গৃহবধূর মামলাটি আদালতের নির্দেশে দু‘বার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। পাল্টা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে (এএসপি) নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই দফা বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে নারীর মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

ওই নারীর স্বামী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে করা পাল্টা মামলাটির তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গৃহবধূর বাবার অভিযোগ, সমাজপতিদের সিদ্ধান্তের পর তিনি ১২ মার্চ স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। তখন তাকে মেয়ে মামলা তুলে না নেয়া পর্যন্ত মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়। বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েদের স্থানীয় মক্তব ও মাদরাসা থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে সমাজপতি এমরাত সওদাগর বলেন, সিমের বিচি লাগানো নিয়ে দুই পক্ষের ঝগড়া হয়েছে। এখানে ধর্ষণচেষ্টার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরপরও মামলা দিয়ে এলাকাকে কলঙ্কিত করেছেন ওই নারী। সমাজের ৫০ থেকে ৬০ জন বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের সমাজচ্যুত করার। তবে মসজিদে নামাজ আদায় এবং বাচ্চাদের মক্তব-মাদরাসায় যেতে নিষেধ করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, আদালতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলার বিষয়ে তিনি অবহিত আছেন। তবে পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি তিনি অবগত নন। কাউকে সমাজচ্যুত করার কোনো সুযোগ নেই।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।