বট-পাকুড়ের জুটি দেখতে মানুষের ভিড়!

বি এম খোরশেদ বি এম খোরশেদ , মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ২১ মার্চ ২০২১

‘কী শোভা কি ছায়া গো, কি স্নেহ কি মায়া গো
কি আঁচল বিছায়েছ, বটের মূলে নদী কূলে কূলে।’

বট গাছের এমন মায়া আর রূপের কথা বর্ণনা রয়েছে জাতীয় সংগীতে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আরও একটি কবিতায় লিখেছেন ‘লুটিয়ে পড়ে জটিল জটা, ঘন পাতায় গহন ঘটা, হেথা-হেথায় রবির ছটা…।’

কবিতার মতোই প্রকৃতিতে এমন এক মায়া ময় পরিবেশ তৈরি করেছে ধামরাইয়ের সাইট্টা বটগাছ। যেখানে মিলন হয়েছে বট ও পাকুড় গাছের। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো বট-পাকুড় জুটি দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। বিশালাকৃতির বটবৃক্ষের নিচে বসে প্রশান্তি শ্বাস নেন তারা।

jagonews24

ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলার জাদুবপুর ইউনিয়নের সাইট্টা গ্রাম। জনশ্রুতি রয়েছে, এ গ্রামের দেবীদাস বংশের এক ব্যক্তি বট ও পাকুড় গাছ দুটি রোপণ করেন। এরপর সনাতন রীতিতে ধুমধাম করে বট-পাকুরের বিয়ে দেয়া হয়। গাছ দুটি প্রায় ৫০০ বছরের জীবন্ত সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। আড়াই বিঘা জমির ওপর বিশালাকৃতির এ বটগাছ তার কাণ্ড শাখা প্রশাখায় তৈরি হয়েছে অন্যরকম সৌন্দর্য। তাই তো ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে এসে মুগ্ধ হন। দেশের অন্যতম প্রাচীন এ দুটি বৃক্ষের মধ্যে পাকুড়টিকে পুরুষ আর বটগাছটিকে নারী মনে করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস থেকে মনোবাসনা পূরণের আশায় অনেকেই ছুটে আসেন এখানে। সরকারি ছুটির দিনে মানুষের ভিড় থাকে বেশি। ফলে বটগাছকে কেন্দ্র করে এ গ্রামে তৈরি হয়েছে এক পর্যটন সম্ভাবনা।

বটগাছের পাশেই সনাতন ধর্মালম্বীরা প্রতিষ্ঠা করেছে একটি কালী মন্দির। সেখানে চলে নানা পূজা অর্চনা এবং বটগাছ ঘিরে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও।

jagonews24

সরেজমিন সাইট্টা বটতলায় দেখা যায়, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, হ্যালো বাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে বটগাছ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন দর্শনার্থীরা। তারা ছবি তুলছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন।

চার বন্ধুকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে এসেছেন আব্দুর রহিম। তিনি জানান, লোকমুখে শুনে বটগাছ দেখার আগ্রহ তৈরি হয়। সেই আগ্রহ থেকেই এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। এত বিশালাকৃতির বটগাছ প্রথম দেখছি।

jagonews24

মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে নববধূকে নিয়ে এসেছেন অঞ্জন দত্ত। তিনি বলেন, নিয়ত করেছিলাম বিয়ের পর সাইট্টা বটগাছ দেখতে যাব। তাই বউকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। সত্যিই অনেক সুন্দর জায়গা। প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি কেউ দেখতে চায় তাহলে এখানে আসতে পারেন।

কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, বটগাছটি ফাঁকা জায়গায় হওয়ায় আশপাশে কোনো খাবার দোকান নেই। গাছের নিচে বসার মতো নেই কোনো পরিবেশও। এ কারণে দূর থেকে আসা লোকজনকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়।

jagonews24

গ্রামের রতিকান্ত খাঁ জানান, বট ও পাকুড় গাছ দুটিকে কে রোপণ করেছিল তার কোনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ দিয়ে বট-পাকুরের বিয়ে দেয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, গ্রামের হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলেই গাছটি দেখভাল করে। কেউ কখনো এ বৃক্ষের অনিষ্ট করে না। এমনকি ডাল পালাও ছাঁটা হয় না কখনো।

jagonews24

প্রকৃতি প্রেমীরা মনে করেন, বট ও পাকুড় গাছ দুটি সংরক্ষণ এবং দর্শনার্থীদের বসার জায়গাসহ আশপাশে সৌন্দয্যবর্ধন করা হলে সাইট্টা বটতলা হয়ে ওঠতে পারে আকর্ষণীয় পযর্টন এলাকা।

এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।