শিক্ষক সেজে উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় প্রতারক চক্র শিক্ষক ও কর্মকর্তা সেজে ফোন দিয়ে পিন (ওটিপি) নম্বর নিয়ে অভিভাবকদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১৩ মার্চ) পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রযুক্তির অপব্যবহার করে কমপক্ষে শতাধিক অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সেবা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। কিন্তু আধুনিক এ ব্যাংকিং সুবিধা সম্পর্কে অভিভাবকদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এ সুযোগে প্রতারকচক্র অভিভাবকদের ধোকায় ফেলে কখনো নগদের অ্যাজেন্ট, আবার কখনো শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষক পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে গোপন পিন নম্বর। ফলে বৃত্তির টাকা সহজেই হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র।
ধুনট উপজেলার ২০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতায়। প্রতি তিন মাস পর পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা দেয়া হয়। প্রাক প্রাথমিকের প্রত্যেক শিক্ষার্থী মাসে পায় ৭৫টাকা এবং প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী পায় ১৫০ টাকা।
২০২০ সালের চতুর্থ কিস্তির এপ্রিল, মে, জুন মাসের জন্য ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। গতকাল বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মোবাইলে এই টাকা পাঠানো হয়েছে। টাকা পাঠানোর পরে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের মেসেজ পাঠায়। এরপর ফোন করে প্রত্যেক অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে নগদ অ্যাকাউন্ট চালু করতে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) সেট করতে বলা হয়। অ্যাকাউন্ট চালু হলে অভিভাবকরা টাকা তুলতে পারেন।
টাকা মোবাইলে পৌঁছানোর পর থেকেই প্রতারকচক্র উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নগদের এজেন্ট, শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক পরিচয় দিয়ে কম টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানায়। এ সময় বেশি টাকা পাঠানো হবে বলে নগদের ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড চাইলে অনেক অভিভাবক তা প্রতারকদের দিয়ে দেন। এরপর এসব অভিভাবকদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে যায়।
উপজেলার ভান্ডারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জাহিদুল ইসলাম, লাল মিয়া, মহল আলী ও বাদশা মিয়াসহ অন্তত ১৫ অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ফোন করে শিক্ষকের কথা বলে মেসেজে আসা নম্বরটা চাইলে দিয়ে দিই। পরে মোবাইল নিয়ে দোকানে টাকা তুলতে গেলে দেখি টাকা নাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, এ প্রতারণার বিষয়টি তারা অভিভাবকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা তেমন সচেতন না। তাদের ফোন করে গোপন পিন নম্বর জানতে চেয়েছে- তারা সেটা বলে দিয়েছে। আর এভাবেই প্রতারক চক্র তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ধুনট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) ফেরদৌসি বেগম বলেন, ‘অভিভাবক ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতারণার বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপর এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দফতরকে আমরা জানিয়েছি। প্রতারকদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করতে এরই মধ্যে প্রচারকাজ শুরু করেছি।’
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসজে/এমকেএইচ