দাশিয়ারছড়ায় সময় যত কমছে কান্না ততই বাড়ছে


প্রকাশিত: ০২:১৬ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৫

দীর্ঘদিনের মাটির মায়া, স্বজনদের দীর্ঘশ্বাস আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে দাশিয়ারছড়ার বাতাস। যেতে নাহি মন চায়, তবু নাগরিকত্বের স্বাদ নেয়া মানুষগুলো যাদের সংস্পর্শে বেড়ে উঠেছে, কেটেছে শৈশবকাল তাদেরকে ছেড়ে যেতে কষ্ট পাচ্ছেন। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে দাসিয়ারছড়ার জনপদ। ভারতে যাওয়া মানুষগুলো শনিবার তাদের শেষ সময়গুলো স্বজন আর প্রতিবেশীদের সঙ্গে একান্তে কাটান।

শনিবার বিকেলে দাশিয়ারছড়ার চেয়ারম্যানপাড়ায় খলিলুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল গাড়িতে ঘরের জিনিসপত্র তুলছেন তারা। এসময় দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন আকলিমা বেগম (৪০)। তাকে স্বান্তনা দিতে গিয়ে কেঁদে একাকার দুই মেয়ে খাদিজা বেগম ও খোরশেদা বেগম। খাদিজা বেগমের মেয়ে অনামিকা তাবাচ্ছুম আশা নানীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন একদিকে। মায়ের কোলে বসে ৫ বছরের শিশু মাকে প্রশ্ন করছে ‘তুমি কাঁদছো কেন মা’ মায়ের উদাস চোখে উত্তর নেই।

খাদিজা বেগমের বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশের কুটি চন্দ্রখানায়। তাই তিনি মা-বাবার সঙ্গে যেতে পারছেন না ভারতে। পরিবার থেকে যাচ্ছেন ৮জন। এখানে থেকে যাচ্ছে দুই মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনি। এ কারণে বাড়ি জুড়ে শুধু আর্তনাদ।

Kurigram
আকলিমা বেগম জানলেন, বাবারে এই মাটিতে হামার জন্ম হইছে। এটা হামার নাড়ি ছেড়া ধন। কেমন করি এই মাটির মায়া ত্যাগ করমো। কথাগুলো বলে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন তিনি।

খলিলুর রহমান বলেন, পরিবারের ৮ জন ভারতে যাচ্ছে রোববার। আমার দুই মেয়ে নাতি-নাতনিকে রেখে যাচ্ছি। জানিনা আর দেখা হবে কিনা। দোয়া করি তারা ভালো থাক। তার মেয়ে খাদিজা বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশে। আমার ভারত যাওয়ার সুযোগ নাই। বাবা-মা তিন ভাই, দুই ভাবী ভারত যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। বলার ভাষা নেই। ভাবা যায়না বেঁচে থেকেও তারা আমাদের কাছে থাকবেনা।

অনামিকা তাবাচ্ছুম আশা বলেন, নানা-নানী, মামা-মামীরা চলে যাচ্ছে। ভাবতে বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। রোববার বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার ১০টি পরিবারের ৪৯ জন ভারতে যাচ্ছেন। তাদেরকে শনিবার কালিরহাট মাদরাসায় একত্রিত করা হয়। রোববার সকাল ৯টায় তারা মালপত্রসহ ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাগভান্ডার ও ভারতের সাহেবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে পাঠাবে প্রশাসন। এদিন ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বিলুপ্ত ২টি ছিটমহলের ৬ পরিবারের ২৪ জন একই সঙ্গে ভারতে যাচ্ছেন।
 
এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।