রাস মেলাকে ঘিরে সুন্দরবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা
সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস মেলাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। এ বছরও মেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক সমাগঘ ঘটবে বলে আশাবাদী বনবিভাগ ও আয়োজক কমিটি।
ঐতিহ্যবাহী দিনদিন ব্যাপী এ রাস উৎসব শুরু হচ্ছে আগামী ২৪ নভেম্বর। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও এ উৎসব সুষ্ঠুুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বন বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা বাড়তি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে, এ উৎসবকে সামনে রেখে দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে চোরা শিকারীর দল হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে হরিণ শিকার রোধ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
সুন্দরবন জুড়ে বন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হবে অঘোষিত রেড এলার্ট। হরিণ শিকাররোধে ইতোমধ্যে বনের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বনবিভাগের ১২টি টিম। এ ছাড়া বনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বনবিভাগ বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।
বন বিভাগ ও উৎসব আয়োজক কমিটির সূত্র জানান, প্রায় শত বছর ধরে বঙ্গোপসাগর কূলে সুন্দরবনের দুবলার চরে আলোর কোল নামকস্থানে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলা কার্ত্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে এ রাস উৎসব উদযাপিত হয়। হিন্দু ধর্মালম্বীরা এ সময় পূর্ণিমার জোয়ারের লোনা পানিতে স্নান করে তাদের পাপ মোচন হবে এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে যোগ দিলেও, কালের বিবর্তনে এখন তা নানা ধর্ম-বর্ণের লোকেদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। আবাল-বৃদ্ধ, বনিতা নির্বিচারে সবার পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে এ মেলা। পরিণত হয় এক মিলন মেলায়।
সাগর-প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের মাঝে পূণ্য অর্জন ও আনন্দ যজ্ঞ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
দুবলার চরের মেলায় লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা যোগে তীর্থ যাত্রী ও দর্শনার্থীরা এসে সমবেত হয় দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। সেই সঙ্গে আসে অসংখ্য বিদেশি পর্যটকও। উৎসবের সময় কুটির শিল্পের বিভিন্ন মালের পসরা সাজিয়ে বসে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এ ছাড়া, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আযোজন করা হয়।
মংলার বে-সরকারি একাধিক ট্যুরিস্ট কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, রাস উৎসবে যোগ দিতে ইতোমধ্যে অনেক ট্যুরিস্ট লঞ্চ ও বোট বুকিং নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে। অনেকে আবার সুবিধা মতো বুকিং না পেলে, হতাশ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব:) জিয়া উদ্দিন জানান, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার বেশ জমজমাটভাবে মেলা উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মংলাসহ সুন্দরবনের ৮টি পয়েন্ট দিয়ে রাস মেলায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব পয়েন্ট দিয়ে অসংখ্য নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার দর্শনার্থী আলোর কোলের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করবে। মেলায় প্রবেশকারীদের নির্দ্দিষ্ট ফি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি পত্র নিতে হবে। এছাড়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে থাকবে পুরো মেলার এলাকা।
দর্শনার্থীদের দিয়ে বন্যপ্রাণি ও ইকোটুরিজমের কোনো ক্ষতি হবে না বলে তিনি জানান।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন জানান, রাস মেলা সুষ্ঠুুভাবে সম্পন্ন ও এর নিরাপত্তায় বন বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এবারও দর্শনার্থী ও তীর্থ যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বনরক্ষীদের পাশাপাশি মেলায় র্যাব, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল থাকছে। এ ছাড়া, মেলায় চোরা শিকারিদের রুখতে সব ধরনের দর্শনার্থীর আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া, পূণ্য স্নানের সময় পটকা ফুটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চোরা শিকারিরা কৌশলে বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকারের পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও এ ধরনের তথ্য রয়েছে। এ কারণে এবারও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। তাদের মতে মংলা, রামপাল ও দাকোপ এলাকার অনেকেই এই উৎসবে অংশ নেয়ার নামে হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও সাইদুল ইসলাম জানান, রাস মেলায় কোনোভাবেই যেন হরিণ শিকার ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া এ বছর দর্শনার্থীদের জালানি কাঠ সুন্দরবন থেকে সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হবে না। তীর্থ যাত্রীরা কোনো রকম বনজ সম্পদ যাতে বিনষ্ট না করেন সে জন্য নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। সাগর মেলাকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের বন বিভাগের পক্ষ থেকে ১৭টি টিমের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরো জানান, হরিণ শিকাররোধে ইতোমধ্যে বনের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বনবিভাগের গঠিত ১২টি টিম।
এমএএস/আরআইপি