হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হাওয়াই মিঠাই
আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশের অনেক গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খাবার। তেমনই একটি খাবারের নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। শিশুদের পছন্দের তালিকায় এ খাবারটি শীর্ষে থাকলেও খেতে ভোলেন না ভিন্ন বয়সের মানুষরাও। তবে বিভিন্ন কারণে অনেকেই খাবারটি তৈরি ছেড়ে দিয়েছেন।
জেলা শহরের সিটি কলেজ পাড়ার বাসিন্দা আরিফা বেগম ও মিরাজুল ইসলাম (স্বামী-স্ত্রী) দুজনে মিলে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ভাড়াবাসায় থেকে তৈরি করতেন হাওয়াই মিঠাই। মিঠাই বিক্রি করে তাদের ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু বর্তমানে একেবারেই কমে গেছে বেচা-বিক্রি। তারা জানিয়েছেন, লোকসানে তারা পেশাটি ছেড়ে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও ঝিনাইদহে হাওয়াই মিঠাই তৈরির কারিগরের সংখ্যা ছিল অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে হাতেগোনা কয়েকজনে।
সাধারণত বাজার থেকে চিনি কিনে সেখানে কিছু জাফরান মিশিয়ে লাল রংয়ের আর সাদা চিনি দিয়ে তৈরি হয় সাদা মিঠাই। মেশিনের নিচে আগুন দিয়ে তাপ দিয়ে তৈরি করে ওপরে চিনি ঢেলে দেয়া হয়। পরে হাত দিয়ে চাকতি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি করা হয় এ মিঠাই।এরপর সেগুলো পলিথিনে প্যাকেটজাত করে পাইপের সঙ্গে ঝুলিয়ে বিক্রেতারা বিক্রি করেন।
আরিফা বেগম, মিরাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মিঠাই কারিগররা জাগো নিউজকে জানান, আগে ভালোই বিক্রি হতো হাওয়াই মিঠাই। দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ পিস বিক্রি হতো। কিন্তু এখন ১০০ পিসও বিক্রি হয় না। বিক্রেতারা অনেক মিঠাই ফিরিয়েও আনেন। তারা জানান, খুবই কষ্টে সময় যাচ্ছে। কোনো সরকারি বা এনজিওর ঋণও তারা পান না।
মিঠাই বিক্রেতা নাজমুল বলেন, ‘আমরা সকাল হলেই হাওয়াই মিঠাই নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়ি। বিক্রি তেমন একটা হয় না। সারা দিনে যা বিক্রি করি তাতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হয়। মাসে মালিক আমাদের পারিশ্রমিক দেয় চার হাজার।’
তবে শহরে ঘুরতে এসে হাওয়াই মিঠা এখনো কিনছেন অনেকে। তারা জানান, এই খাবারটি আগে অনেক পাওয়া যেত। এখন মেলা ছাড়া তেমনটি দেখাই মেলে না।
অর্ধেন্দু হালদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘খাবারটি খুবই লোভনীয়। এটি দেখলেই শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চারা এটি বেশি পছন্দ করে। এজন্য মেলা থেকে কিনেই নিলাম একটি মিঠাই।’
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শিবলী চৌধুরী জানান, হাওয়াই মিঠাই খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুবই কম। খাবারটি সব বয়সের মানুষ পছন্দ করলেও শিশুদের কাছে তা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কিন্তু পিৎজা, হটডগসহ নানা আধুনিক খাবারের ভিড়ে ঐতিহ্যবাহী এ খাবারটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
তিনি বলেন, আগে সব জায়গায় বিক্রি করতে দেখা গেলেও এখন আর তেমনটি হয় না। তাই আবারো বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী খাবারটির জৌলুস ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যাগ নেয়া খুবই জরুরি।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জাগো নিউজকে জানান, অনেক সময় খাবারটি স্বাস্থসম্মত হয় না। তাই সরাসরি ঋণ না দিয়ে কিভাবে ঐতিহ্য বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা যায় তা ভাববে জেলা প্রশাসন।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/এমএস