মাসোহারা দিয়ে চলে অটোরিকশা
অডিও শুনুন
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দিন দিন বেড়েই চলেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। শহরের রাস্তাঘাট সংকীর্ণ থাকায় সড়কে অবৈধ পার্কিং করে রাখা হয় রিকশাগুলো। এতে যানজট লেগেই থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই সড়ক-মহাসড়কে এই বাহনের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলছে। প্যাডেলচালিত রিকশার চেয়ে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে এই বাহন চলার কারণে মুহূর্তেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ঘটছে অঙ্গহানি থেকে শুরু করে প্রাণহানিও।
বাছিরপুর এলাকার শফিক নামের এক অটোরিকশা চালক জানান, জুড়ীতে মোট ছয়টি সমিতি রয়েছে। ফি দিয়ে সমিতিতে নিবন্ধন করতে হয়। জুড়ীতে তিন শতাধিকের ওপর ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। প্রতিদিন সমিতিতে ১০ টাকা করে জমা দিতে হয় তাদের।
জুড়ী নিউমার্কেটের সম্মুখের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের এক রিকশাচালক বলেন, রিকশা কিনে সড়কে চালাতে হলে সমিতিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হয়। পরে এখান থেকে ১০০০ হাজার টাকা থানায় দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি মাসে সমিতিতে ১০০ টাকা করে চাঁদা দেই। এখান থেকে সমিতি ৭০ টাকা করে থানা পুলিশকে দেয়।
উপজেলার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন স্ট্যান্ডের রিকশাচালক সমেদ মিয়া বলেন, আমাদের সমিতিতে রিকশা রেজিস্ট্রেশন করতে হলে তিন হাজার টাকা লাগে। এখান থেকে সমিতি সভাপতি দুই হাজার টাকা থানায় দেন। থানায় না দিলে রিকশা চলাচলের অনুমতি পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া প্রতি মাসে ১৫০ টাকা করে সমিতিতে চাঁদা দেই। এই ১৫০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকাই থানায় দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অটোরিকশা সমিতির এক সভাপতি বলেন, অটোরিকশাগুলো অবৈধ, কিন্তু পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে চালাতে হয় চালকদের।
তিনি পুলিশকে চাঁদা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চালকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেই, সেখান থেকে ৭০ টাকা প্রশাসনকে দিতাম। এখন অনুমোদনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটা প্লেট দেয়া হয় চালকদের। সেটা রিকশার পেছনে লাগানো থাকে।
সভাপতি আরও বলেন, ‘থানার আগের এক স্যারকে টাকা দেয়া লাগতো। এখন আর রেট করে টাকা দেই না। চা পানের কিছু টাকা দিয়ে দিলেই চলে। তবে পুলিশের কার কাছে টাকা দেন নাম বলতে রাজি হননি তিনি’।
স্থানীয় একটি জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, জুড়ী বাজারে এখন অটোরিকশার রাজত্ব বলা যায়। অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। এগুলো মোটরচালিত হওয়ায় দ্রুতগতিতে চলাচল করে।
স্থানীয় সংগঠক আশরাফুজ্জামান রিশাদ বলেন, এই রিকশাগুলোর ওপর উচ্চ আদালতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও প্রকাশ্যে বাজারে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা। এটা নিয়ন্ত্রণে উপজেলার কর্তৃপক্ষ কিংবা পুলিশ বিভাগের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অটোরিকশাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান তিনি।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে উপজেলা পরিষদ মিটিংয়ে কথা হয়েছে।
পুলিশকে টাকা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ 'ডাহা মিথ্যা' ও ভুয়া।
এসএমএম/এমকেএইচ