বিএনপি-স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সুর, ভিন্ন কথা নির্বাচন কর্মকর্তার
বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে (স্বতন্ত্র) মারধর, অবরুদ্ধ করে রাখা, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে বুথের ভেতর অবস্থান নিয়ে ভোটারদের নৌকা প্রতীকে সিল মারতে বাধ্য করার অভিযোগ করেছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে তাদের ঢালাও অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয় বলে দাবি সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার।
বানারীপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত মো. জিয়াউল হক মিন্টু অভিযোগ করেন, ভোট শুরু হওয়ার আগেই ৯টি কেন্দ্রের সব কেন্দ্র থেকেই তার পোলিং এজেন্টেদের ভয়ভীতি ও মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। তিনি সকাল ৮টায় ৯ নম্বর কেন্দ্রে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারে তার পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের দেয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে দেখতে পান ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মেয়রের ব্যালট ভোটারদের হাত থেকে নিয়ে নৌকায় সিল মারছেন। তিনি প্রতিবাদ করলে কায়েস লস্কর নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা তাকে মারধর করেন। পরে ওই কেন্দ্রে তাকে ১০টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মো. জিয়াউল হক মিন্টু আরও বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বানারীপাড়া পৌর শহরে নিয়ে আসা হচ্ছে। তারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে মহড়া দিচ্ছেন। কেন্দ্রে না যেতে তার কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষ থেকে জবরদস্তি ও প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এদিকে বানারীপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. রিয়াজ আহম্মেদ মৃধা অভিযোগ করেন, ৯টি কেন্দ্রের সব কয়টি থেকেই ভোট শুরুর আগেই তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি ঘুরে ঘুরে ওই সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের বসিয়ে দিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর ফের তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
মো. রিয়াজ আহম্মেদ মৃধা বলেন, কেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট দেয়ার উৎসব চলছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা এ বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে কোনো কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন।
চতুর্থ ধাপে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া পৌরসভা ছাড়াও মুলাদী পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র শফিক উজ্জামান রুবেল, বিএনপির অধ্যাপক আল মামুন, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দিদারুল আহসান খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিএনপির প্রার্থী আল মামুন, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) দিদারুল আহসান খান বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এদিকে সকাল থেকে বানারীপাড়া ও মুলাদী পৌরসভার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮ থেকে ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। তবে এসব কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে ছিল না বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর এজেন্ট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে। কেন্দ্রগুলোর বাইরে প্রচুর সংখ্যক ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
তবে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। কোথাও কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে তিনি বানারীপাড়া পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রই ঘুরে দেখেছেন। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলছে।
বানারীপাড়ার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর (স্বতন্ত্র) অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়ার ঢালাওভাবে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, কেন্দ্র ঘুরে তার সত্যতা মেলেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জিয়াউল হক মিন্টু কয়েকটি কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন। ওই সব কেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার এজেন্টরা কেন্দ্র থেকে স্বেচ্ছায় চলে গেছেন।
তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জিয়াউল হক মিন্টুকে তার এজেন্টদের নিয়ে আসতে বলেছিলেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জিয়াউল হক মিন্টু তার এজেন্ট নিয়ে আসেননি।
তিনি আরও বলেন, যদি এজেন্ট আসত তাহলে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু কারও এজেন্ট না এলে তাদের কিছুই করার নেই। এছাড়া খোঁজ নিয়ে জেনেছেন মুলাদী পৌরসভা নির্বাচনেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সেখানে সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে।
সাইফ আমীন/এফএ/এমএস