হাট জমলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না ফুলচাষিরা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক বেনাপোল
প্রকাশিত: ০৪:৫৯ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পহেলা পাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এবার তাতে ভাটা পড়েছে। বিগত বছরগুলোতে বাড়তি দাম দিয়ে ফুল কিনতে হতো দিবসগুলোতে। ফলে চাষীরাও ভাল লাভ পেতেন।

এবার ফুলের হাট জমলেও মহামারির কারণে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি ফুল তিন থেকে পাঁচ টাকা কম দরে বিক্রি হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুলের দাম তুলতে পারা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, চাহিদা না থাকায় এ বছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গত চারদিনে মাত্র পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।

jagonews24

যশোর শহর থেকে পশ্চিমের উপজেলা ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার ৭৫টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল। ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখা যায়। প্রতিদিন ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারার শত শত ফুলচাষির আনাগোনা শুরু হয় গদখালীর বাজারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট-বড় পাইকাররাও সেখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। এরপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ফুল ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও।

গদখালী এলাকার ফুল চাষিরা প্রতি মৌসুমে ৭টি উৎসবকে ঘিরে মূল বেচাকেনা করে থাকেন। উৎসবগুলোর মধ্যে বিজয় দিবস ও নববর্ষের বেচাকেনা শেষ করেছেন তারা। আসন্ন বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ফুল বাজারে তুলতে প্রস্তুত চাষিরা। তাই গদখালীর প্রতিটি মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে গোলাপ, রজারবেরা, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেনড্যুলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনে ফুল।

jagonews24

কিন্তু ভাইরাসের প্রভাবে গতবছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কোন ব্যবসা করতে পারেনি তারা। তার উপর এসে আঘাত করেছে ঘূণিঝড় আম্পান। বিশ্বভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে এসব লোকসান কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছিলেন চাষিরা। বাজারের যে অবস্থা তাতে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার আশংকা করছেন ফুলচাষীসহ ব্যবসায়ীরা।

ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফুলের বাজার শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ছিল সবচেয়ে বড় বাজার। বাজারে গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, ভুট্টা কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল নিয়ে গদখালী হাটে হাজির হন চাষিরা। পর্যাপ্ত ফুল ওঠায় জমে ওঠে গদখালীর ফুলহাট। এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা সকাল ১১ টা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে ফুল কেনেন।

চাষিরা জানান, গত বছর এসময় প্রতি পিস গোলাপ ১৫ থেকে ১৬ টাকা দামে বিক্রি হয়। অন্যান্য ফুলও উচ্চদামে বিক্রি করেছেন তারা। তবে এ বছর দাম তার থেকে কিছুটা কম। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এ অবস্থা। তবে যে বেচাকেনা হয়েছে তাতে তারা সন্তুষ্ট।

jagonews24

সুমন হোসেন নামে একজন চাষি বলেন, আজকে আমি তিন হাজার গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছি। শুরুতে ১০-১১ টাকা করে প্রতিপিস ফুল বিক্রি করেছি। পরে নয় টাকা করেও বিক্রি করেছি। গত দুইদিনও ভালো দামে ফুল বিক্রি করেছি। এ বছর করোনার কারণে সমস্যায় ছিলাম। তবে ফুলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং দাম পাওয়ায় সন্তুষ্ট। গত বছরের তুলনায় এবার ফুলের দাম অনেক কম। ধারণা করেছিলাম, আজকের বাজারে প্রতিপিস গোলাপ ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি করবো।

সোলায়মান হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ফুল নয় থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। গোলাপ ফুল আনিছি ছয় হাজার। গত বছরের থেকে এবার মার্কেট কম। গতবছর মাল বিক্রি করেছি ১৭ থেকে ১৮ টাকা দরে। যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাও সন্তোষজনক। তবে করোনা ও আম্পানের পরে এ দামে লাভে যাওয়া যাবে না।

আমিনুর রহমান নামে এক চাষি বলেন, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে প্রস্তুতিটা ভালোই ছিল। আশা করছিলাম এ বছর গোলাপের দাম ১৫ টাকা করে পাবো। অন্যান্য বছরের ন্যায়। কিন্তু এবছর গোলাপের দাম তিন টাকা করে কম পাইছি। অন্যান্য ফুল রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাসের দামও অন্যবছরের তুলনায় কম পাচ্ছি। তারপরও আমরা আশাহত হইনি। মূলত করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাজারে প্রভাবটা পড়েছে।

এদিকে ক্রেতারা জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ফুলের ক্রয়মূল্য তুলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা।

jagonews24

পাবনা থেকে আসা রায়হান আলী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আজ এ হাট থেকে গোলাপ ফুল কিনেছি আট থেকে দশ টাকার মধ্যে। আশা করেছিলাম ৫-৬ টাকার মধ্যে গোলাপ কিনতে পারবো। কিন্তু সেটা হলো না। আবার স্কুল-কলেজ বন্ধ। সেই ক্ষেত্রে ফুলটা কিনে নিয়ে ঠিকঠাক মতো বিক্রি করতে পারবো কি-না এটা নিয়ে একটু সংশয়ের মধ্যে আছি।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে আসা হায়দার আলী বলেন, প্রতি বছর বসন্ত, ভালোবাসা দিবসের আগে ফুল কিনতে আসি। আট টাকা থেকে ১২ টাকার মধ্যে গোলাপ কিনেছি। জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুল প্রতিপিস দশ টাকা করে কিনেছি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এবার বেচাকেনা কম হবে। তাই একটু আতংকের মধ্যে আছি।

শাহজাহান আলী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ফুল কিনে খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। সব আইটেমের ফুল কিনেছি। গত বছর ১৬ টাকা পর্যন্ত গোলাপ বিক্রি হইলো। এবার দশ টাকা করে কিনিছি। চাষিরা এবার কম দাম পেয়েছে। তারপরও একেবারে কম না।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম দাবি করেন, চাহিদা না থাকায় এবছর বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায়নি। করোনার কারণে সারাদেশে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ। যার কারণে ফুলের চাহিদা নেই। এছাড়া বিদেশ থেকে প্লাস্টিক ফুল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলেন তিনি।

মো. জামাল হোসেন/ আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।