পানিতে পাউবোর ৪ কোটি টাকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ছবি : লিপসন আহমেদ

সুনামগঞ্জ শহরতলীর ইব্রাহীমপুর গ্রামে পাউবোর নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায়ই সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ওই অংশে ধস নেমেছে। এর আগে ২০০৯ এবং ২০১০ সালে ওখানে নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ হয়েছিল।

গ্রামবাসী বলেন, অপরিকল্পিত এবং ত্রুটিপূর্ণ কাজ হওয়ায় সরকারের প্রায় চার কোটি টাকা পানিতে গেছে। এর আগেও প্রায় দুই কোটি টাকার লোকসান হয়।

সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর উত্তরপাড়ের গ্রাম ইব্রাহিমপুরকে সুরমা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে প্রায় চার কোটি টাকার অস্থায়ী নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছে। গেল বছর এই প্রকল্পে কাজ হয়েছে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার।

এই বছর এক কোটি ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকার কাজ চলমান রয়েছে। কাজের সময় বালি-সিমেন্ট মিশ্রিত ৪৬ হাজার ৮৭৩টি বস্তা ভাঙন এলাকায় ফেলার কথা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি এই পর্যন্ত বস্তা ফেলা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।

jagonews24

এই বস্তা ফেলার কাজ চলা অবস্থায়ই সোমবার এই অংশে বড় আকারের ধস দেখা দিয়েছে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এআরকে গ্রুপ এই প্রকল্পে কাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন্যার সময় নদীর তীরে ভাঙনের উপরিভাগে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। কিন্তু নদীভাঙনের গভীর স্থানে বস্তা ফেলা হয়নি। সোমবার নদীপাড়ে ড্রেজারের মাটি স্তুপ করে রাখায় মাটির চাপে তীরে ধস নেমেছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা গাজী রহমান জাগো নিউজকে জানান, দুবছর কাজ করায় আশার সঞ্চার হয়েছিল। সোমবার আবার নদীভাঙন দেখা দেয়ায় সকলের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।

গ্রামের জগলুল মিয়া জানান, পুরাতন ভাঙন এলাকায় কিছু সংস্কার কাজের পর নতুনভাবে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় আমরা মারাত্মক ঝুঁকিতে আছি। যেকোনো সময় বড় আকারের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই ভাঙনে বালুর বস্তা কম ফেলে শহরের ভাঙনে নিয়ে বস্তা ফেলা হয়েছে।

ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এআরকে গ্রুপের কাজ দেখভালকারী আতাউর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা অনুযায়ী শহরতলীর ইব্রাহীমপুর গ্রামের নদীভাঙন রোধের কাজ করছি। কাজ চলাকালীন সময়ে ধস নামায় আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

jagonews24

নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল সিদ্দিকী বলেন, ইব্রাহিমপুরের এই ভাঙন স্থানে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে এক কোটি ৭০ লাখ টাকার কাজ হয়েছে। গেল বছর দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং এবার কাজ হচ্ছে এক কোটি ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকার।

সোমবার এই সংরক্ষণ প্রকল্পের একটি অংশ ধসে পড়েছে। পরে আমরা দেখতে পেয়েছি ওখানে বস্তা চুয়ে পানি আসছে। কিন্তু আশপাশে কোন ডোবা বা পুকুর নেই। কেন এমন হলো বোঝা যাচ্ছে না। ওখানে কাজে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ তত্ত্বাবধান করেছেন। তবে ১৮ মিটারের নদীভাঙনে আরো বেশি বস্তা ফেললে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন এই প্রকৌশলী।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বললেন, শহরতলীর ইব্রাহীমপুর গ্রামে নদীভাঙনের কাজ চলাকালীন সময়ে কেন ধস নেমেছে এই বিষয়টি যাচাই করতে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দফতরে পত্র পাঠিয়েছি। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা এসে বিষয়টি দেখবেন। ভাঙন সংস্কারের কাজ চলছে। তবে কাজটি অস্থায়ীভাবে করা হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ীভাবে কাজ করতে হবে।

লিপসন আহমেদ/এসএমএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।