সাতক্ষীরায় সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায় আজ
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী ৬৩ জেলার মধ্যে জেএমবির সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত ছয়টি মামলার রায়ের জন্য বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেন বিচারক শরিফুল ইসলাম।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বোমা হামলার ঘটনায় এ ছয়টি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এরমধ্যে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, জেলা জজ আদালত চত্ত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্ত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা মোড়সহ পাঁচটি স্থানে একযোগে এই বোমা হামলা ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ানোর ঘটনা ঘটে।
ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাঁকালের দলিলউদ্দিন দফাদারের ছেলে নাসিরুদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শী বাকাল ইসলামপুর চরের পকেটমার রওশানের বিবরণ মতে ধরা পড়ে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাঁটি চিহ্নিত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২০০৫ সালে পাঁচটি মামলা করে।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সাতক্ষীরা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোহাম্মদ বাদী হয়ে আরো একটি মামলা করেন। এসব মামলায় কমপক্ষে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) এ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়।
সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া ছাড়াও জেএমবির বহু গোপন তথ্য জানায় তারা। পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় সাতক্ষীরায়। গ্রেফতারকৃত মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ২০১১ সালের জুনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যান।
এছাড়া গ্রেফতার হওয়া সব আসামি সাতক্ষীরার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবনন্দি দেন। ২০১১ সালের জুন মাসে আনিসুর রহমান খোকন জামিন পেলেও পরে তার জামিন বাতিল করা হয়। তিনি পরে আবারো জামিন পান।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাঁকাল ইসলামসপুরের নাসিরুদ্দিন দফাদার ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর মস্তিস্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা কারাগারে মারা যান।
আসামিরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করায় মামলার রায় হতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লেগে যায়। আসামিদের মধ্যে- শায়খ রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।
২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি সবগুলো মামলায় ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। ২০০৭ সালে দায়েরকৃত মামলাটিতে ২৩ জনের নাম উলেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মামলাগুলি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়। যথাসময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৭ সালের ২৫ জুন মামলাগুলো খুলনা থেকে ফেরত আসে সাতক্ষীরায়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলাগুলির বিচার কাজ শুরু করেন।
পুলিশের প্রথম দায়েরকৃত পাঁচটি মামলার প্রত্যেকটিতে ১৯ জন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ইতোমধ্যে প্রথম পাঁচটি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হলেও মঙ্গলবার সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলার (এসটিসি ১২০/৮) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ছিল।
প্রথম পাঁচটি মামলার রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হলেও একইসাথে ছয়টি মামলার রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে মাহাবুবর রহমান, সাইফুল ইসলাম, ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিন, বিলাল হোসেন ওরফে আব্দুলাহ, হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল, মনিরুজ্জামান মুন্না, সাইফুল ওরফে আসাদুজ্জামান ওরফে হাজারী ওরফে সাঈদ, খালিদ হোসেন ওরফে মিন্টু ও শামীম হোসেন ওরফে গালিবকে আদালতে আনা হয়। জামিনে থেকে আদালতে হাজিরা দেন ওবায়দুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম, আনিসুর রহমান ওরফে ইসমাইল, আলমগীর হোসেন, আব্দুল আহাদ, আশরাফ আলী ও মামুন।
তবে যুক্তিতর্ক শেষে জামিনে থাকা আটজনের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হলেও বার্ধক্যজনিত ও অসুস্থতার কারণে সদরের খড়িবিলার মমতাজ উদ্দিন ও আশাশুনির কুল্যার নূর আলী মেম্বরের জামিন বাতিল করা হয়নি।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের ফখরুদ্দিন রাজি, সাতক্ষীরা সদরের সাতানির আবুল খায়ের, কলারোয়ার পাটুলি গ্রামের নাঈমুদ্দিনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মনোয়র হোসেন উজ্জ্বল জামিন পেয়ে পলাতক রয়েছেন।
এসএমএম/জেআইএম