শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকে আবর্জনার স্তূপ
অযত্ন-অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হতে বসেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় চার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে করা সড়কের অস্তিত্ব। বর্তমানে নামফলকগুলো অস্তিত্ব সংকটসহ আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
২০১৮ সালে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়কের নামকরণ করে ফলক স্থাপন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাত্তরের রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হওয়া চার বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সড়কের নামকরণের দাবি তোলেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীলরা। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে প্রায় চার লাখ টাকা ব্যয়ে দৃশ্যমান চারটি ফলক নির্মাণ করা হয়। সেই ফলকে চারজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা রয়েছে। ওই সময় সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের দাফতরিক কাজকর্ম, পত্র যোগাযোগ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটের সাইনবোর্ডে বীর
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা সড়কগুলো হলো-উপজেলার নিমগাছি গ্রামের শহীদ কোমর উদ্দিন আহম্মেদের নামে ‘ধুনট-সোনাহাটা পাকা সড়ক’, ভান্ডারবাড়ি গ্রামের শহীদ ওসমান গনির নামে ‘ধুনট-গোসাইবাড়ি পাকা সড়ক’, পিরহাটি গ্রামের শহীদ আব্দুর রউফ মল্লিকের নামে ‘হুকুম আলী-মথুরাপুর পাকা সড়ক’ এবং খাদুলী গ্রামের শহীদ গোলাম হোসেনের নামে ‘মথুরাপুর-ধানঘরা পাকা সড়ক
’।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কোমর উদ্দিন ১৯৭১ সালে সেনাসদস্য পদে যশোর জেলায় চাকরি করতেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে পাকসেনাদের বুলেটের আঘাতে যশোর শহর এলাকায় তিনি শহীদ হন। বগুড়ায় পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে শহীদ হন ওসমান গনি। শহীদ গোলাম হোসেন ৬ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের মেডিকেল টিমে নিয়োজিত ছিলেন। নীলফামারী জেলার ডিমলা এলাকায় পাক হানাদারদের অতর্কিত হামলাকে প্রতিহত করতে গিয়ে তিনি শহীদ হন।
শহীদ আব্দুর রউফ মল্লিক ১৯৭১ সালে রাজশাহী গোদাগাড়ি থানায় পুলিশ সদস্য পদে কর্মরত ছিলেন। সেখানে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাকসেনারা পদ্মা নদীর তীরে তাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যার পর মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফেরদৌস আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত সব ধরনের কাজে ব্যবহার হবে সেই আশা নিয়ে চারজন বীর শহীদের নামে সড়কের নামকরণ করা হয়। সব ক্ষেত্রে এই নাম ব্যবহারের সিদ্ধান্তও হয় তখন। কিন্তু ব্যবহার তো দূরের কথা; তা এখন প্রায় ধ্বংসের পথে।’
তিনি বলেন, ‘বীর শহীদদের নামের অস্তিত্ব এভাবে ধ্বংস হতে দেখলে খুবই কষ্ট লাগে। আমি প্রশাসনের কাছে বীর শহীদদের স্মৃতি রক্ষা ও এর বাস্তব ব্যবহারের দাবি জানাই।’
শহীদ আব্দুর রউফ মল্লিকের সন্তান সাংবাদিক গোলাম কিবরিয়া কামাল বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণ এবং ফলক বসানো হয়েছে ঠিকই, তবে এর সঠিক সংরক্ষণ হয়নি। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা বা প্রশাসন কেউই আর এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়নি।’
ধুনট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে নামফলক রক্ষণাবেক্ষণ এবং সবক্ষেত্রে বীর শহীদদের নামে সড়কের নাম ব্যবহারের বিষয়টিও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
এসআর/এমকেএইচ