নড়াইলে খানাখন্দে ভরা ১৭০ কিলোমিটার সড়ক


প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

নড়াইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ১৭০ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে বেহালদশা ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর জাতীয় মহাসড়কটি।

এছাড়া লোহাগড়া-নড়াগাতি সড়ক, নড়াইল-গোবরা-নওয়াপাড়া সড়ক, নড়াইল-তুলারামপুর-মাইজপাড়া সড়ক, তেরখাদা-বড়নাল-কালিয়া সড়কসহ নড়াইল শহর সংযোগ সড়ক ভেঙেচুরে খানাখন্দ এবং বড় বড় গর্ত হয়েছে।

অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন যানবাহন শ্রমিকসহ ভুক্তভোগীরা। এদিকে, সড়ক সংস্কার ও মেরামতসহ পাঁচদফা দাবিতে আগামি ১৯ নভেম্বর যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সব সড়কে ২৪ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস, ট্রাক এবং যানবাহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে ১৭০ দশমিক এক কিলোমিটারের নয়টি সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর জাতীয় মহাসড়কটি ৩১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং নড়াইল-মাগুরা আঞ্চলিক মহাসড়ক ১৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার।

অন্য সাতটি সড়ক জেলা পর্যায়ের। এর মধ্যে লোহাগড়া-নহাটা-কালিশংকরপুর-মহম্মদপুর সড়ক ২৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার, নড়াইল-গোবরা-ফুলতলা ও নড়াইল-কালিয়া সড়ক দুটি ২৫ কিলোমিটার করে, লোহাগড়া-নড়াগাতি সড়ক ২৩ দশমিক ৬১ কিলোমিটার, নড়াইল-তুলারামপুর-মাইজপাড়া সড়ক ১০ কিলোমিটার, তেরখাদা-বড়নাল-কালিয়া সড়ক আট কিলোমিটার এবং নড়াইল শহর সংযোগ সড়ক তিন দশমিক ৮০ কিলোমিটার।
 
এসব সড়কের বেশিরভাগই ভেঙেচুরে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির কার্যকরী সভাপতি ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, নড়াইলে সড়ক ও জনপথের ১৭০ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা যানবাহন চলাচলের উপযোগী আছে। ভাঙাচেরা সড়কগুলোর অবস্থা এতটাই করুণ যে, পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

মাঝে-মধ্যে সংস্কার করলেও নিম্নমানের কাজের কারণে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে পিচ উঠে আবারো খানাখন্দে ও গর্তে পরিণত হয়েছে। ভাঙা রাস্তার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ঘটনা বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাসচালক ইকতার মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, নড়াইল-গোবরা-নোয়াপাড়া সড়কের নড়াইল থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এতোটাই করুণ যে, একটা ভ্যান আগে যেতে পারে তো, বাস চলতে পারে না।

এ সড়কে একেকটি গর্ত হাঁটু সমান এবং এ গর্তের মধ্যে গাড়ির চাকা পড়লে কী অবস্থা হয়! প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ সড়কটি মেরামত না করায় গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই প্রতিটি সেকেন্ড ঝুঁকির সঙ্গে বাস চালাচ্ছি।

নড়াইল-মাওয়া-ঢাকা সড়কের বাসচালক বাচ্চু বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, খারাপ রাস্তার কারণে গাড়ির যন্ত্রপাতি ভেঙে দুর্ঘটনা হলেও চালকদের কিছুই করার থাকছে না। কিন্তু সড়ক ও জনপথ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ট্রাক চালক মহসিন সরদার জাগো নিউজকে জানান, কালনা-নড়াইল সড়কের পিচ উঠে যাওয়ায় গাড়ির টায়ার কেটে যাচ্ছে। একটি টায়ার ভালোভাবে ছয়মাসও যাচ্ছে না।

লোহাগড়ার ট্রাক চালক সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, জাতীয় এ মহাসড়ক দিয়ে বেনাপোল, যশোর, খুলনা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, মাদারীপুর, ঢাকসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। অথচ সড়কটি মেরামতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে।

Narail

নড়াইল-যশোর-খুলনা সড়কের বাসচালক রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, এ রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। আধাঘণ্টার রাস্তার যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগছে। নড়াইল, লোহাগড়া, কালনা ও কালিয়ার বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পাবনা জেলার ‘মেসার্স শফিক ট্রেডার্স’ ২০১৩ সালের ১০ মে থেকে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর জাতীয় মহাসড়কটির কালনা থেকে নড়াইল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এবং নড়াইল-কালিয়ার সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করলেও তিনমাস ১৬ দিনের মধ্যে দুটি সড়কের পিচ উঠে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত হয়। এখন কালনা-নড়াইলের ১৮ কিলোমিটার সড়কের করুণ দশার পাশাপাশি নড়াইল-কালিয়া সড়কের আটলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

নড়াইল-গোবরা-নোয়াপাড়া সড়কের বাসযাত্রী আশরাফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, রাস্তাটি ভেঙেচুরে বড় বড় গর্ত হওয়ার কারণে একটি বাস অপর কোনো যানবাহনকে সাইড দিতে গেলে আগে থেকে অপেক্ষাকৃত একটু ভালো রাস্তা দেখে যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তবুও গাড়ি উল্টে যাওয়ার ভয়ে থাকেন যাত্রীরা। অনেক সময় গাড়ি থেকে যাত্রীদের নেমে যেতে হয়।

নড়াইল-খুলনা সড়কের বাসযাত্রী সালেহা পারভীন জানান, খারাপ রাস্তার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রচন্ড ঝাঁকুনি আর গাড়ির বডির শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। অপর বাসযাত্রী ছবি রানী বলেন, রাস্তার অবস্থা এতোটাই খারাপ যে বাসে ঠিক মতো বসেও থাকা যায় না। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন অসুস্থ লোক ও শিশুযাত্রীরা। মাইজপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা আলমগীর জানান, নড়াইল-তুলারামপুর-মাইজপাড়া সড়কের ১০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ।

কোলা, দিঘলিয়া, কাঠাদুরা, মহাজনসহ এলাকাবাসী জানান, লোহাগড়া-নড়াগাতি সড়কের লোহাগড়া থেকে মহাজন অংশের প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তা পিচ উঠে খানাখন্দ হয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। কালিয়ার বড়নাল গ্রামের নজরুল মল্লিক ও মাথাভাঙার জাফর সিকদার জাগো নিউজকে জানান, তেরখাদা-বড়নাল-কালিয়া সড়কে আট কিলোমিটারের পিচ ও খোয়া উঠে বাইসাইকেল চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে, নড়াইল শহর সংযোগ সড়কের রূপগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ধোপাখোলা পর্যন্ত পিচ উঠে প্রতিনিয়ত ধূলাবালিতে একাকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ

নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাশ জাগো নিউজকে বলেন, কিছু কিছু সড়ক বর্ষা মৌসুমে বড় রকমের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে লোহাগড়া-নড়াগাতি সড়ক এবং তেরখাদা-বড়নাল-কালিয়া সড়ক দুটি অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় আছে। এর মধ্যে লোহাগড়া-নড়াগাতি সড়কের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর সড়কটির ১৮ কিলোমিটার মেরামত করা হলেও ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এদিকে, শ্রমিক নেতা ছাদেক আহম্মেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য সড়ক দ্রুত সংস্কার ও মেরামত করাসহ নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ, রাস্তায় হাইওয়ে, ট্রাফিক, থানা, ফাঁড়ি ও পেট্রোল পুলিশের যত্রতত্র চেকিংয়ের নামে হয়রানি এবং ওয়েস্কেলে পণ্যবাহী গাড়ির শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করে সহজ ব্যবস্থা করা, পৌরসভার রাস্তা ও টার্মিনাল ব্যবহার না করলে যানবাহন থেকে জোর করে পৌর টোল আদায় বন্ধ করাসহ রাজনৈতিক দলের প্রভাবে অবৈধভাবে দখলকৃত কুষ্টিয়া জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নকে দখলমুক্ত করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামি ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ১৯ নভেম্বর খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সব সড়কে সকাল ছয়টা থেকে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনে ২৪ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।

গত ২৯ অক্টোবর ফেডারেশনের যশোর কার্যালয়ে খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির সভায় পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে প্রাচীরপত্রসহ (পোস্টার) প্রচার-প্রচারণা চলছে।

হাফিজুল নিলু/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।