মুজাহিদের রায় কার্যকরের অপেক্ষায় ফরিদপুরবাসী
মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায় কার্যকরের অপেক্ষায় ভুক্তভোগীসহ পুরো ফরিদপুরবাসী।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মুজাহিদ ফরিদপুরের বিভিন্ন হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকায় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করে এবং দেশ ত্যাগে বাধ্য করায়। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হাম্মদ মওলানা, গফুর, ইছাহাক পাক হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে জেলার সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের তিনটি হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রাম বৈদ্যডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গী ও বালাডাঙ্গি এলাকায় হামলা চালায়। ওই সময় তারা কাননবালা, ননীবালা, তারা চান, প্রফুল্ল ময়চানসহ ৩২ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে এবং বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে নিয়ে যায়।
অভিযোগে জানা যায়, ৭১ এর ২৯ আগস্ট মুজাহিদ, জেলার মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর এলাকার বীরেন্দ্র নাথ সাহার বাড়িতে ঢুকে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় রাজাকারের সহায়তায় নিরোধ কুমার, বীরেন্দ্র নাথ সাহা, জগবন্ধু মিত্র, জলদ কুমার সাহাসহ ১১ জনকে হাত-মুখ বেঁধে সারিবদ্ধভাবে গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় ঝর্ণা নামের এক নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে। এছাড়াও মুজাহিদ ও তার সঙ্গীরা অনিল সাহার বাড়ি লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই পরিবারের মানুষ দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়। ওই সকল ঘটনার সাক্ষী নারায়ণ মন্ডল, সত্য সাহা, চিত্ত সাহা, কাজী লুৎফর। তারা মুজাহিদের হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ট্রাইব্যুনাল আদালতে সাক্ষ্য দেয়।
মুজাহিদের বাকচর গ্রামের সত্য সাহা জাগো নিউজকে জানান, আমাদের গ্রামের হিন্দু বাড়ি থেকে লোকজন ধরে তারা বাকচর আঙ্গিনায় নিয়ে এসে তাদের উপর গণহত্যা চালায়। যুদ্ধের চুয়াল্লিশ বছর পর আজ এই গণহত্যার বিচার হচ্ছে। রায় কার্যকরের অপেক্ষায় আছি আমরা।
বাবা বাবা মিলিটারি আসছে। এই কথা শুনে সে (বীরেন্দ্র নাথ সাহা) দৌঁড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দূরে মাঠ থেকে তাকে ধরে এনে আঙিনার উপর হত্যা করে। তার কোনো দোষ ছিল না। এভাবেই বর্ণনা দেন ৭১ সালে ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর গ্রামের গণহত্যার শিকার হওয়া বীরেন্দ্র নাথ সাহার স্ত্রী বেলা রানী সাহা।
বাকচর গ্রামের গোপল চন্দ্র সাহা বাবু জানান, তার মামাতো বোন ঝর্ণাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে এই মুজাহিদ বাহিনী। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কার্যকর দেখতে চাই।
একই গ্রামের সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের হিন্দু বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে যাকে পেয়েছে তাকে ধরে এনে বাকচর আঙিনার উপর এনে হত্যা করেছে। মিলিটারিরা চলে গেলে পরে আমরা লাশগুলোকে নদীর পারে চাপা মাটি দেই বলে জানান সত্তর বছরের বৃদ্ধা সুবল সাহা।
৭১ এর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার গোয়ালচামটের (রথখোলার) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের ছেলে রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে। ফরিদপুর পুরনো সার্কিট হাউসে রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদের সামনে পাকিস্তানি সেনা অফিসার মেজর আকরাম কোরাইশীর কাছে হাজির করা হয় বাবু নাথকে।
তখন মুজাহিদ ওই মেজরের সঙ্গে কথা বলার পর বাবু নাথের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় । তার একটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়। নির্যাতনের পর মুজাহিদের ইশারায় তাকে হত্যা করার উদ্দেশে বিহারি ক্যাম্পের উত্তর পাশে আব্দুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে রাজাকাররা আটকে রাখে। পরে রাতে রণজিৎ নাথ বাবু তার আটক ঘরের জানালার শিক বাঁকা করে ওই ঘর থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচান।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার খলিলুর রহমান জোগো নিউজকে জানান, মুজাহিদ ৭১ সালে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আমার দাবি দ্রুত তার ফাঁসির আদেশটি কার্যকর করা হোক। এর মধ্য দিয়ে ফরিদপুর কলঙ্কমুক্ত হবেও বলে তিনি মনে করেন।
এসএম তরুন/এসএস/এমএস