২০ বছর পর ফেরি ভিড়ল আরিচা ঘাটে
প্রায় ২০ বছর পর আবারও ফেরি ভিড়ল মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাটে। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরীক্ষামূলকভাবে আরিচা থেকে পাবনার কাজীরহাট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। এই যাত্রার মধ্য দিয়েই আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চলাচল শুরু করে বিআইডব্লিউটিসি। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হবে।
আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চলাচল শুরু করতে সকালে পাটুরিয়া ঘাট থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান নামে রো রো ফেরিটি নিয়ে আসা হয় আরিচা ঘাটে। এ সময় নানা বয়সী উৎসুক মানুষ ভিড় করে ফেরিঘাটের পন্টুনে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেক, বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমানসহ দুই সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা গাড়িসহ ওই ফেরিতে করে কাজীরহাট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যান। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে তারা সফলভাবে কাজীরহাট ঘাটে পৌঁছান।
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের জানান, আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করতে স্থানীয় দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এই নৌ-পথের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নাব্য সংকট। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে দীর্ঘ ড্রেজিংয়ের পর চ্যালের নাব্য ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন পানির গভীরতা রয়েছে ১০ থেকে ১২ ফুট। এই গভীরতায় অনায়াসে ফেরি চলাচল করতে পারবে।
তিনি জানান, পরীক্ষামূলক চলাচল সফল হলেই বাণিজ্যিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান জানান, দুই প্রান্তের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দিকে ৪টি কে-টাইপ ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার শুরু হবে। পরবর্তীতে ফেরি সংখ্যা বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ঘাটটি চালু হলে রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে। পাশাপাশি যমুনা সেতুতে ৩০ টনের অধিক মালামাল বহন করার নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক ট্রাক এই ফেরিতে পারাপারের সুবিধা নেবে। এতে মানুষের সময় এবং খরচ দুটোই সাশ্রয় হবে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে কর্ণফুলি নামে একটি ফেরি দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আরিচা ঘাটের ফেরি সার্ভিস। প্রথম যাত্রায় একটি গাড়ি পার হয়েছিল। সেই গাড়িটিকে ভাড়া গুনতে হয়েছিল ৭৫ পয়সা। ১৯৮৩ সালে নদী বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায় আরিচা ঘাট।
১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু (তৎকালীন যমুনা বহুমুখি সেতু) চালু হলে আরিচা ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমতে থাকে। এর মাঝেই প্রকট হয় নাব্য সংকট। ফলে ২০০১ সালে ফেরি ঘাটটি পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। এরপরই প্রাণহীন হয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাট।
তবে আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দুই পাড়ের লাখো মানুষ।
বি.এম খোরশেদ/এফএ/জিকেএস