৬ বছরেও কার্যকর হয়নি মন্ত্রীর নির্দেশনা
চাকরিচ্যুত রেলের লোকো মাস্টার লুৎফর রহমানের চাকরি পুনর্বহাল করে তার সব বকেয়া পরিশোধের নির্দেশনা দেয়ার ছয় পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ভুক্তভোগীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
১৯৮৫ সালে চাকরিচ্যুত করা হয় রাজবাড়ীর লোকো মাস্টার লুৎফর রহমানকে। পরবর্তীতে তিনি এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট, রাষ্ট্রপতি, রেলপথমন্ত্রী, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পত্র চালাচালি করে চাকরির বৈধতা ফিরে পান তিনি।
যার পরিপ্রেক্ষিতে সবশেষ ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশপত্র পাওয়ার পর তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক তার মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে (ডিজি) প্রয়োজনীয় নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থার জন্য বলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনার ছয় বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি লুৎফর রহমান। এ অবস্থায় রেলের জায়গায় জরাজীর্ণ ঘরে অসুস্থ হয়ে প্রতিবন্ধী ছেলে ও পরিবার নিয়ে জীবনের শেষ সময় পার করছেন তিনি।
লুৎফর রহমানের ছেলে মো. মেহেবুবুর রহমান বলেন, তার বাবা প্রায় ৩০ বছর আগে চাকরিচ্যুত হন। এরপর তার সঙ্গে তিনিও বিভিন্নস্থানে চাকরির বৈধতার জন্য দৌঁড়াদৌঁড়ি করেন। এক পর্যায়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট তার বাবার চাকরিচ্যুতের আদেশ সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর তার বাবা চাকরি বহালের আবেদন করলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি।
মেহেবুবুর রহমানের অভিযোগ, পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলে তিনি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বললেও কোনো কাজ হয়নি। এরপর আবারও স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রীর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। তখন রেলপথ মন্ত্রী রেলের ডিজিকে লিখিতভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনা ২০১৪ সালে দেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় নির্দেশনার ছয় বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান তারা পাননি।
তিনি বলেন, তার বাবা এখন মৃত্যু শয্যায়। ২০০৫ সালের তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। টাকার অভাবে অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা ও ভালো খাবার দিতে পারছেন না। তিনি নিজে শারীরিক প্রতিবন্ধী, কোনোরকম টিউশনি করে সংসার চালান এবং রেলের জায়গায় ঘর তুলে কষ্ট করে বসবাস করছেন।
তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান, তার বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যেন সব টাকা পান এবং সেই টাকা দিয়ে যেন তার চিকিৎসা করাতে পারেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মেহেবুব। এছাড়া তাদের এমন কোনো সম্পদ নেই যে, সে সম্পদ বিক্রি করে তার বাবার চিকিৎসা করাবেন। তাই হাইকোর্টের রায়, রাষ্ট্রপতির আদেশ ও রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তায়নে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
চাকরিচ্যুত লোকো মাস্টার লুৎফর রহমান বলেন, অন্যের দোষ তার ওপর চাপিয়ে অন্যায়ভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এখন অসহায় হয়ে পড়ে আছেন, দেখার কেউ নেই। রেলের কাছে তার লাখ লাখ টাকা পড়ে আছে, কিন্তু তিনি কোনো টাকা পাচ্ছেন না। অসুস্থ অবস্থায় এখন রেলের জমির উপর ভাঙা ঘরে পড়ে আছেন। মৃত্যুর আগে চাকরি জীবনের সব টাকা তিনি ফেরত পেতে চান।
রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আবদুল জলিল বলেন, লোকো মাস্টার লুৎফর রহমান অত্যন্ত ভালো মানুষ। এখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। তার পরিবারের অবস্থাও ভালো না। কোনো কারণে তার চাকরি চলে যায়। পরবর্তী তার চাকরির বৈধতার পক্ষে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও রেলমন্ত্রী চাকরি পুনর্বহালসহ সব পাওনা পরিশোধের আদেশ দিয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কোনো টাকা-পয়সা পাননি। এখন তিনি খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন।
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছেন, তাহলে তার সব কিছু বুঝিয়ে দেয়া উচিত। সব বুঝে পেলে জীবনের শেষ সময়ে একটু শান্তিতে থাকতে এবং চিকিৎসা করাতে পারবেন লুৎফর রহমান।
রুবেলুর রহমান/এমআরআর/এমকেএইচ