শীতই যেন পানসে লাগে ঝিনাইদহের খেজুর গুড় ছাড়া

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ছবি : আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

খেজুর রস আর গুড় ছাড়া যেন শীতকাল পানসে লাগে। সেই রস গুড়ের বড় একটি অংশ উৎপাদন হয় দেশের দক্ষিণের জেলা ঝিনাইদহে। প্রতিবছর ঋতু পরিক্রমায় শীত এলেই রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ জেলার গাছিরা।

শীত মৌসুমে ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে উৎপাদিত গুড় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে চলে যায়। প্রতি সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা জেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় বাজার থেকে এসব গুড় কিনে বড় বড় শহরে পাঠিয়ে দেন। এতে এ অঞ্চলের কৃষকরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখছে ঝিনাইদহের উৎপাদিত খেজুর গুড়।

ঝিনাইদহের কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় খেজুর গাছ রয়েছে প্রায় চার লাখ ৩২ হাজার। এসব গাছ থেকে প্রতিবছর গুড় উৎপাদন হয় ৮৩৭ থেকে এক হাজার মেট্রিক টন। যা স্থানীয়দের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর বাকিটা বিক্রি করে থাকে। বর্তমানে এ জেলার উৎপাদিত গুড় ও পাটালী ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

jagonews24

তবে রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে গুড় তৈরি পর্যন্ত একজন গাছি ও তার পরিবারের সদস্যদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। গাছ তোলা ও গাছ কাটতে একজন গাছির পরিশ্রমের শেষ থাকে না।

বিকেলে গাছ কাটার পর রাত শেষে কনকনে শীত উপেক্ষা করে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনতে হয়। এরপর গৃহিনীরা অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়ে গুড় তৈরি করেন। ফলে বর্তমান সময়ে মানুষ আর গুড় তৈরির মতো কঠোর পরিশ্রম করতে চান না। ফলে দিনে দিনে গাছের সঙ্গে সঙ্গে গাছিও কমে যাচ্ছে।

এদিকে স্থানীয়দের ভাষ্য, শীত এলেই ঐতিহ্যবাহী নানা রকম পিঠা পায়েসের ধুম পড়ে ঝিনাইদহের ঘরে ঘরে। একদিকে যেমন খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাছিরা অন্যদিকে জেলার প্রতিটা ঘরে ঘরে পিঠা পায়েস তৈরির প্রধান উপকরণ চালের গুড়া তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন গৃহিণীরা।

jagonews24

শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রস ও গুড়ের তৈরি ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাঠিসাপটা, রসে ভেজা পিঠাসহ নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহি সুস্বাদু পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। এ সময় বিভিন্ন শহরে থাকা আপনজন ও আত্মীয়রা শখ করে ঝিনাইদহে আসেন মৌসুমি পিঠা পায়েস খাওয়ার জন্য।

তবে আশঙ্কাজনকভাবে ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যাবহৃত হওয়ায় বিলুপ্তির পথে এ গাছ।

তবে কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলছে, এখন কৃষকরা আগের মতো খেজুর গাছ ইট ভাটায় বিক্রি করে না। আমরা এই গাছ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। বেশ কয়েকটি উপজেলার রাস্তার পাশে পতিত জাগায় নতুন নতুন বাগান সৃষ্টির প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এছাড়া কৃষক পর্যায়ে নতুন নতুন বাগন তৈরি হচ্ছে।

jagonews24

জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গামের স্কুলশিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, শীতের ঐতিহ্য হলো খেজুরের রস ও গুড়। রস গুড় ছাড়া শীত কল্পনাতিত। শীতের আড়াই থেকে তিন মাস খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। যত বেশি শীত পড়বে রস তত বেশি মিষ্টি ও পরিষ্কার হয়।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জাগো নিউজকে জানান, ঝিনাইদহের গুড় অনেক বিখ্যাত। যশোরের পরই গুড় উৎপাদনে এ জেলার স্থান। এখানে উৎপাদিত খেজুর গুড় ঢাকা, চট্টগ্রম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। মাটির হাড়িতে দুই, পাঁচ ও আট কেজি করে এসব গুড় সরবরাহ করা হয়।

এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে খেজুর গাছ রয়েছে। আগে অনেক কৃষক না বুঝে খেজুর গাছ ইট ভাটায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন আর কৃষকরা সেটা করেন না। আমরা এই গাছ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া কৃষক পর্যায়ে নতুন নতুন বাগন তৈরি হচ্ছে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।