ইনকিউবেটরে জন্ম নিল উটপাখির ৪ ছানা
গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বেশ কয়েকবার উটপাখি ডিম দিয়েছিল। প্রাকৃতিকভাবে ডিম দেয়ার পর উটপাখিগুলো ডিমে পর্যাপ্ত তাপ না দেয়ায় ডিম ফুটে বাচ্চার জন্ম হচ্ছিল না। এ নিয়ে ভাবনায় পড়েন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নিজ উদ্যোগে ডিসেম্বর মাসে নোয়াখালীর সাইফুল ইসলামের তৈরি একটি ইনকিউবেটর ১৩ হাজার টাকা দামে সংগ্রহ করেন। পরে ইনকিউবেটরটি পার্কে স্থাপন করে চলতি মৌসুমে উটপাখির কিছু ডিম সংগ্রহ করে তিনি ইনকিউবেটরে দেন। সেখান থেকেই ডিম ফুঁটে বের হয়ে আসে উটপাখির চার ছানা।
কৃত্রিমতার এই সফলতার সাথে পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশে এ বছর আরো ছয়টি ছানার জন্ম হয়েছে। চলতি বছর জন্ম হওয়া নতুন ১০ ছানা নিয়ে সাফারি পার্কে উটপাখির সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬টিতে।
তিনি জানান, ইনকিউবেটরে ফোঁটা বাচ্চাগুলোকে প্রথমে উট পাখি বেষ্টনীতে দেয়া হয়। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক উট পাখিগুলো নতুন বাচ্চাগুলোকে মেনে নিচ্ছিল না। প্রাপ্ত বয়স্ক উট পাখিগুলোর বাচ্চাগুলোকে তাপ না দেয়ায় তীব্র শীতে বাচ্চাগুলোর ক্ষতি হতে পারে- এ চিন্তায় পার্কের একটি কক্ষে হাতে তৈরি ব্রোডারের বৈদ্যুতিক বাতির মাধ্যমে তাপ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু তাও পর্যাপ্ত তাপ পাচ্ছিলো না বাচ্চাগুলো। মধ্যরাতে পার্কের ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে অপর একটি ব্রোডার কিনে এনে বাচ্চাগুলোকে বৈদ্যুতিক বাতির সাহায্যে তাপ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
পরবর্তীতে পুনরায় বেষ্টনীর মাঝে একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করে বাচ্চাগুলোকে বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত রাখতে ২৪ ঘণ্টা জেনারেটরের পাশাপাশি সোলারের লাইটের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও একজন জুনিয়র ওয়াইল্ড স্কাউট সমীর সুর চৌধুরী সার্বক্ষণিক দাঁড়িয়ে থেকে বাচ্চাগুলোর দেখাশুনা করছেন এবং সুপারভাইজার আনিসুর রহমান দিনে ৭-১০ বার খাবার দিচ্ছেন। একজন চিকিৎসক দিনে কয়েকবার বাচ্চাগুলোকে দেখভাল করছেন।
সাফারি পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান বলেন, উটপাখি এক প্রকারের বৃহৎ, উড্ডয়নে অক্ষম আফ্রিকান পাখি। এদের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৩ মিটার ও ওজন ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঘণ্টায় দৌঁড়াতে পারে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এরা তৃণভোজী পাখি। প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি উটপাখি অর্ধশতাধিকের উপর ডিম দিয়ে থাকে। একটি ডিমের ওজন হয়ে থাকে দেড় কেজি পর্যন্ত।
তিনি আরো বলেন, পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্নে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ছয়টি উটপাখি আনা হয়েছিল। পরে অসুস্থ হয়ে সেখান থেকে একটি উটপাখি মারা যায়। এরপর প্রতিবছরই উটপাখি ডিম দিলেও পর্যাপ্ত তাপ না দেয়ায় কয়েক বছরে মাত্র একটি ছানা পাওয়া যায়। বাকি ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিবছর এতোগুলো ডিম নষ্ট হওয়ায় পার্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে একপ্রকার অস্বস্তি ছিল। যদিও এ বছরের সফলতায় সব কেটে গেছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান আরও বলেন, দেশের বৃহৎ এই সাফারি পার্ক দর্শনার্থীদের বিনোদনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি নানা ধরনের প্রাণীর সফল প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এতদিন প্রাকৃতিক পরিবেশে উটপাখি ডিম দিয়ে তাতে তাপ না দেয়ায় তা নষ্ট হয়ে যেত। এ মৌসুমে ইনকিউবেটর স্থাপন করে কৃত্তিমভাবে চারটি ছানা পাওয়া গেছে। এছাড়াও ডিম দেয়ার পর নজরদারী করায় প্রাকতিকভাবে আরো ছয়টি ছানা মোট ১০টি ছানার জন্ম হয়েছে। এ ছানাগুলোর বয়স এখন প্রায় এক মাস হলেও আরো কয়েকমাস এদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখার পর তা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
শিহাব খান/এসএমএম/জেআইএম