অপহরণ মামলায় নূর হোসেনের রিমান্ডের আবেদন জানাবেন আইনজীবী


প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাতখুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে কাঁচপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী ইসমাইলকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানাবেন বাদিপক্ষের আইনজীবী। আজ (বুধবার) এ মামলার ধার্য তারিখে আদালতে আবেদনটি দাখিল করা হবে। তবে নুর হোসেনের নির্দেশে ও অর্থের বিনিময়ে র‌্যাব আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইলকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, ইসমাঈল অপহরন মামলায় নূর হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হলেই অনেক রহস্যের দ্বার উন্মোচিত হবে। ইসমাঈলের অপহরণের সঙ্গে নূর হোসেন ও তার শ্যালক নূর আলমসহ অন্যান্যরা জড়িত। আমরা আদালতে নূর হোসেনকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করবো। তাহলেই জানতে পারবো ইসমাইলকে কোথায় আটকে রাখা রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাইক্রোবাস থামিয়ে বন্ধু হিরনকে মারধর করে ফিল্মি স্টাইলে ইসমাইলকে অপহরণ করা হয়। ওই ঘটনায় ইসমাইলের ছোটভাই মান্নান বাদি হয়ে প্রথমে কাঁচপুরের কুতুবপুর এলাকার মোশারফ, সেলিম, কাইউম, কাউছার, মামুন, নাছিরউদ্দিনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

আলোচিত সাতখুনের পর ওই বছরের ১৫ মে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় মানববন্ধনে ইসমাইলের পরিবার অভিযোগ করেন, অপহৃত ইসমাইলকে ইপিজেডের অভ্যন্তরে র‌্যাবের ক্যাম্পের (ব্যাচেলর বিল্ডিং) নিচতলায় আটকে রাখা হয়েছিল। তারেক সাঈদের দাবিকৃত দুই কোটি টাকা দিতে না পারায় আমরা ইসমাইলকে ফেরত পাইনি। সাতখুনের পর ইসমাইলকে আদমজীস্থ কার্যালয় থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

তারা আরো জানান, ইসমাইল হরিপুর ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্যাটারি, ইপিলিয়ন অনন্ত প্যাকেজিং, পেরিপ্যাক প্যাকেজিংসহ কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি ব্যবসা ও বালু ভরাটের ব্যবসা করতেন। ওই সকল ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতেই সন্ত্রাসী নূর হোসেনের শ্যালক ছাত্রলীগ নেতা নূর আলমের ইন্ধনেই ইসমাইলকে অপহরণ করা হয়।

ঘটনার পর থেকেই অপহৃত ইসমাইলের ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে নূর আলম। ইসমাইল অপহরণ মামলার আসামিরা সবাই ছিলেন নূর আলমের লোক। আলোচিত সাতখুনের পর নূর আলমের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার থেকে নূর হোসেনের অস্ত্র উদ্ধার হলেও সে রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অপহৃতের ছোটভাই মামলার বাদি আবদুল মান্নান জানান, ঘটনার পরে ইসমাইল অপহরণের অভিযোগে মামলা করতে চাইলে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ সেটা আমলে নেয়নি। পরে গত বছরের ১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা ও নূর হোসেন, তার শ্যালক নূর আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি।

পরে বিচারক মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে সাতখুনের ঘটনার প্রতিবেদনের সঙ্গে এ অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিল সেনাবাহিনীর অবসরে পাঠানো ও র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদকে।

অপর আসামিরা হলেন আদমজীস্থ সেনাবাহিনীর অবসরে পাঠানো র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন ও র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত স্পেশাল ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির ইনচার্জ নৌবাহিনীর বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো লে. কমান্ডার এম এম রানা, সাতখুনের প্রধান আসামী নূর হোসেন, তার শ্যালক নূর আলম, সোনারগাঁও থানা যুবদলের সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, শরীফ হোসেন, আবদুল কাদির, আবুল হোসেন, শামীম, মনির হোসেন, নাজমুল, আজিজ চৌধুরী, ফকির ওরফে ফকিরা ও মঞ্জু। এ ১৬ জনের মধ্যে ফকির ওরফে ফকিরা ও মঞ্জু র‌্যাবের সোর্স হিসেবে পরিচিত।

মান্নানের দাবি, নূর হোসেনকে ইসমাইল অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করতে পারে ডিবি পুলিশ। এছাড়া আলোচিত সাতখুনের মামলার তদন্ত ডিবি পুলিশই করেছে। ইসমাইল অপহরণের মামলায় নূর হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক রহস্যের উন্মোচন হতে পারে। তারা এ বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নিবেন।

এ বিষয়ে জানতে মামলাটির তদন্তাকরী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক তদন্ত আবুল খায়েরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

মো. শাহাদাত হোসেন/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।