সুদের টাকার জন্য আগে নিয়ে গেছেন গরু, এবার ঘরে তালা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২১
ছবি : জাহিদ খন্দকার

গাইবান্ধার সাঘাটায় দাদনের (সুদ) পাঁচ হাজার টাকার লাভ দিতে না পাড়ায় দিনমজুর দম্পতির ঘরে তালা দিলেন দাদন ব্যবসায়ী ওসমান মিয়া। ১৩ দিন থেকে দিনমজুর আবুল হোসেন (৫৫) ও তার স্ত্রী মাজেদা বেগম (৫০) বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। লাভের টাকা না পেলে পরিবারের যে কোনো সদস্যকে পাওয়ামাত্র বেঁধে রাখার হুমকি দেয়া হয়েছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ওই পরিবার। তবে দাদন ব্যবসায়ী প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনাটি ঘটে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনমজুর আবুল কৃষি শ্রমিক হিসেবে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার স্ত্রী মাজেদা বেগম সংসারের প্রয়োজনে একই গ্রামের মৃত এলাহীর ছেলে ওসমান মিয়ার কাছ থেকে দাদনে পাঁচ হাজার টাকা নেন। ১৩ মাসে এই পাঁচ হাজার টাকার সুদ দেন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। চলতি (জানুয়ারি) মাসে সংসারের তেমন আয় না থাকায় সুদ দিতে পারেননি। দাদন ব্যবসায়ী ওসমান মিয়া সুদের টাকার চাপ দিলে পরিবারটি সময় চায়। ওসমান সময় না দিয়ে উল্টো তাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে তালা দিয়ে দেন। এতে এই পরিবারটি গত ১০ দিন মানবেতর জীবনযাপন করলেও ওই ব্যবসায়ী প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভুক্তভোগী পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়নি।

দিনমজুর আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দাদন ব্যবসায়ী ওসমান মিয়া ঘরে তালা লাগানোর কারণে আমরা দিনে গাছতলায় আর রাতে অন্যের বাড়িতে রাতযাপন করছি। পাঁচ হাজার টাকার জন্য আমাদের ঘরে তালা লাগানোর পরে আমরা কোনো প্রতিবাদ করিনি। কারণ প্রতিবাদ করলে আমাদের তুলে নিয়ে গিয়ে মারপিট করবে।’

jagonews24

আবুল হোসেনের স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, ‘সংসারের প্রয়োজনে গত বছর দাদন ব্যবসায়ী ওসমান মিয়া আগেও সুদের টাকার জন্য বাড়িতে এসে আমাকে মারপিট করে গরু নিয়ে যান। এবার ঘরে তালা দিয়েছেন। প্রতিবাদ করলে মারপিটের হুমকি দেন।’

এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। তাই বলে কি আমাদের ঘরে তালা দেবে, আমরা কি বিচার পাব না?’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে দাদন ব্যবসায়ী ওসমান মিয়ার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে বাসায় লোক পাঠিয়েও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানান, এমন ঘটনা কষ্টের। ভুক্তভোগী পরিবারের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

এমন ঘটনায় পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না, এ বিষয়ে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দাদনের টাকার জন্য কেউ কারও বাড়িতে তালা লাগানোর ঘটনার অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জাহিদ খন্দকার/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।