কাগজ কেটে দুর্যোগে আশ্রয়গৃহের নকশা করল আমেনা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২১

আইলা, সিডর ও আম্ফানে বিপর্যস্ত সাতক্ষীরার উপকূল। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা প্রাণীকুলের সাথে মানুষের জীবনও আজ ওষ্ঠাগত। কখনো কখনো আকস্মিক দুর্যোগে জীবন রক্ষার নিরাপদ নিশ্চয়তাও যেন ভাগ্যে জোটে না।

গেল বছরের ২০ মে উপকূলের বিশাল এলাকা জুড়ে বয়ে গেছে আম্ফান নামের ঘুর্ণিঝড়। ঝড়ে প্রাণহানি ঘটেনি সত্য। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটির টাকার ওপরে। জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে নতুন নতুন নামে ওঁৎ পেতে আছে মহাপ্লাবন বা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়।

দুর্যোগে উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় করণীয় নিয়ে ভাবনা আসে কিশোরী আমেনা খাতুনের মনে। করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় নিজের মেধা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন দুর্যোগে আশ্রয়গৃহের নকশা। ঝড় জলোচ্ছ্বাসে নিরাপদ জীবনের নিশ্চিত গ্যারান্টি হতে পারে তার নকশা অনুযায়ী নির্মিত বাড়িটি।

jagonews24

আমেনা খাতুন কালনা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী। সে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের ছাবের আলী গাজীর মেয়ে। তবে বর্তমানে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামে মামা আছাদুল ইসলামের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করে।

আমেনা কাগজ কেটে তিন তলার এই বাড়িটি (নকশা) তৈরি করেছেন। পুরু কাগজ কেটে আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে এ বাড়িটি (নকশা) তৈরি করতে আমেনার প্রায় দুই মাস সময় লেগেছে। বাড়ির প্রথম তলায় গবাদিপশুসহ হাস মুরগি ও দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ও তৃতীয় তলায় নারী ও শিশুরা আশ্রয় নিতে পারবেন। বাড়ির একপাশ দিয়ে উপরে ওঠার সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। জরুরি বিপদে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামাসহ বাইরের সহায়তা আদান-প্রদান করা যাবে।

এছাড়া দুর্যোগের প্রকৃত চিত্র দেখার জন্য ঝুল বারান্দাও রাখা হয়েছে। যে কেউ বারান্দায় এসেও বাইরের সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে।

jagonews24

আমেনা খাতুন জানান, সরকার মহা প্রলয়ংকারি দুর্যোগে উপকূলবাসীর জন্য নির্মাণ করেছে আশ্রয়কেন্দ্র। যা পর্যাপ্ত নয়। দুর্যোগের রাত ঘনিয়ে এলেই এলাকার নড়বড়ে স্কুল কলেজের শ্রেণিকক্ষগুলো হয়ে ওঠে আশ্রয়শিবির। সেখানে ঠিকমতো থাকে না শৌচাগার। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষগুলো যেন কারাবাস করার মতো সময় পার করে। দুর্যোগের সঙ্গে বাড়ে দুর্ভোগও। এ চিন্তা থেকেই তিনি নির্মাণ করেছেন এই বাড়িটি।

তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালের আম্ফান ঝড় হয়। এর পর থেকে এখনো বন্ধ হয়নি গ্রামে জোয়ার ভাটা। এলাকার অসংখ্য মানুষ ভাটার টানে পানি নেমে গেলে রান্না করে, জোয়ার এলে তারা ওপরে উঠে খাবার খায়। নোনা পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া মানুষের বাড়িগুলো এখনো সংস্কার করা যাননি। বহু মানুষ বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়ে শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া নদী উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নকে করে ফেলেছে বিচ্ছিন্ন এক জনপদে।

এসব দেখেই তার মাথায় ঘরের নকশা করার চিন্তা আসে। এরকম বাড়ি প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে তৈরি করা গেলে মানুষ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেত বলে মনে করে সে।

এসএমএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।