দুই দিনের সন্তানকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষা দিলেন মা
দুই দিনের নবজাতককে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিলেন উদ্যমী এক মা। তবে শ্রেণি কক্ষে নয়, অ্যাম্বুলেন্সে বসে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পরীক্ষা দিয়েছেন কলেজছাত্রী পিংকী রানী পাল (২২)।
এ সময় ওই অ্যাম্বুলেন্সে নবজাতক এবং পিংকী রানীর মাও ছিলেন। নানির কোলে নাতনি, মায়ের হাতে কলম- এমন এক অদম্য নারীর ইচ্ছাশক্তির গল্প এখন সিলেটের বিয়ানীবাজারবাসীর মুখে মুখে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী পিংকী রানী পাল। উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের কোনাগামে তার বাবার বাড়ি। বিয়ে হয়েছে মৌলভীবাজারে। স্বামী প্রবাসে থাকলেও স্ত্রীর শিক্ষাগ্রহণের মানসিকতার বিপরীতমুখী হননি তিনি। গর্ভে সন্তান নিয়ে চূড়ান্ত বর্ষের একটি বিষয়ে পরীক্ষা দেন।
গত শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন। রোববার (২৪ জানুয়ারি) তার ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরীক্ষা ছিল। একদিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান অন্যদিকে জীবনের লক্ষ্য স্থির করার মুহূর্ত। কোনটা বেছে নেবেন। এমন প্রশ্নের উত্তর যখন সবাই খুঁজছেন তখন ওই মা-ই সিদ্ধান্ত দিলেন। পরিবারের সদস্যদের জানান, সন্তান সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দেবেন।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে পরীক্ষার আগের রাতে যোগাযোগ করা হয়। সে মোতাবেক সব প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সদ্য সন্তান জন্ম দেয়া মায়ের দোতলায় পরীক্ষার হলে যাওয়া কঠিন, তাই অ্যাম্বুলেন্সেই তার পরীক্ষা নেয়া হয়।
তিনি বলেন, যথাসময়ে ওই ছাত্রী কেন্দ্রে উপস্থিত হলে অ্যাম্বুলেন্সে একজন শিক্ষক (মহিলা পরিদর্শক) নিয়োগ করি। প্রশ্নপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে ওই ছাত্রী পুরো চার ঘণ্টা পরীক্ষা দেন। আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।
পিংকী রানী পাল জানান, হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে সরাসরি কেন্দ্রে যাই। পরীক্ষা শেষে আবার হাসপাতালে আসি। এই সময়ের মধ্যে আমার সন্তান একাধিকবার কেঁদে উঠলেও আমি তাকে নিয়ন্ত্রণ করি। এতে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি চাই পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরি করতে। তাই কোনো বাধাই মেনে নেইনি।
তিনি বলেন, সবকিছুতে আমার স্বামীর সম্মতি ছিল। আসলে পরিবারের সমর্থন না থাকলে কিছুই করা যায় না। বুধবার ওই মায়ের পরীক্ষা দেয়ার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে নারীদের শৃঙ্খল ভাঙার মানসিকতাকে বাহবা দেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ছামির মাহমুদ/এএইচ/এমএস