বাবার হত্যার বিচার চেয়ে কাঁদল ছেলে
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার সুনই জলমহালে মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মণকে (৬২) গলা কেটে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে সিলেট বিভাগীয় বাংলাদেশ ক্ষত্রিয় বর্মণ সম্প্রদায়ের ইতিহাস অনুশীলন ও কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বর্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ারে (ট্রাফিক পয়েন্ট) এই মানববন্ধনের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন নিহত শ্যামাচরণ বমর্ণের ছেলে চন্দন বমর্ণ।
মাইক হাতে নিয়ে সেই দিন রাতের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নাম বলে কাঁদতে শুরু করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নির্দেশে তারই ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেলন হোসেন রোকন তার বাবা শ্যামাচরণ বর্মণকে খুন করেছেন।
মানববন্ধনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও শ্যামাচরণ বর্মণের হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেন বক্তারা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সিলেট বিভাগীয় আহ্বায়ক সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মণ রানা, সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সুধির রঞ্জন বর্মণ, সদস্য সচিব বীরলাল বর্মণ, লেখক সজলচন্দ্র সরকার, সংগঠনের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার সভাপতি রাজ কুমার বর্মণ ও সাধারণ সম্পাদক লিটন বর্মণ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার সুনই জলমহাল নিয়ে দুই মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব চলছিল দুই বছর ধরে। জলমহালের খাজনা পরিশোধ করে দুই পক্ষই মহালের মালিকানা দাবি করে আসছে।
সম্প্রতি চন্দন বর্মণের পক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেলন হোসেন রোকনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছিল।
এই দ্বন্দ্বের জেরে ৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় জলমহালে পাড়ে থাকা চন্দন বর্মণের পক্ষের মাছের খলায় আগুন ধরিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষের লোকজন সুনই গ্রামের সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মনের পিতা শ্যামাচরণ বর্মণকে গলা করে হত্যা করে।
এসময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। জলমহালে থাকা একপক্ষের স্থাপনা (খলা) পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই রাতেই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ২৩ জনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এ ঘটনায় ধর্মপাশা ঘটনায় ৯ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, তার ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেলন হোসেন রোকন, আরও দুই ভাই মোবারক হোসেন মাসুদ ও মোবারক হোসেন যতনসহ ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় এজাহার নিয়ে যান চন্দন বর্মণ।
পুলিশ তাদের মামলা গ্রহণ করেনি। কিন্তু পরদিন অজ্ঞাতনামা ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টরকে বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। এরপর ১৪ জানুয়ারি ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করেন নিহতের ছেলে চন্দন বর্মণ।
কিন্তু থানায় একটি মামলা চলমান থাকায় থানা থেকে আদালতের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আদালতে দাখিল করা মামলাটি স্থগিত থাকে এবং থানা থেকে প্রতিবেদন আসার পর এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ মর্মে আদেশ দেন আদালত।
লিপসন আহমেদ/এসএমএম/এমএস