শেরপুরে দলীয় মনোনয়ন পেতে চলছে জোর লবিং


প্রকাশিত: ০৪:০৮ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা শেরপুর। আসন্ন পৌর নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং শুরু করেছেন। কেউ কেউ শহরে শো-ডাউন করছেন, কেউ আবার পেশাজীবী-শিক্ষক, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করছেন। এলাকায় এলাকায় গিয়ে সভা করছেন। জেলার নেতা এবং ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দলীয় মনোনয়নের আশায়। আর এ সংখ্যাটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেই বেশি। তাদের ধারণা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হলে অর্ধেক কর্ম সাবাড়।

বসে নেই কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা রঙিন প্যানাবোর্ড টানিয়ে, লিফলেট ছড়িয়ে, সৌজন্য বিনিময় করে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জাহির করছেন।

শহরের বিভিন্ন আড্ডায়, বাজারে, সাধারণ আলোচনায় ওঠে আসছে-কারা কারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন-সকলের মাঝে এমন কৌতুহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শেরপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. হুমায়ুন কবীর রুমান ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সাবেক মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন। এছাড়া শহরের নবীনগর এলাকার তরুণ শিল্পপতি আনিসুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আনোয়ারুল হাসান উৎপল এবং সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলীর ছোট ভাই শ্রমিক নেতা আরিফ রেজা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এদিকে, মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা সাধারণের মাঝে নেই। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক আশীষ গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই মাঠে রয়েছেন। এখন তিনি ভোট প্রার্থনা করছেন। এছাড়া সাবেক কমিশনার ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান এবং জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. রমজান আলীও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শহরে নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমান মেয়র হুমায়ুন কবীর রুমান দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে আরেকবার তিনি মেয়র পদে থাকতে চান এবং ফের তাকে নির্বাচিত করার জন্য পৌরবাসীর সহযোগিতা কামনা করছেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিকের সঙ্গে সাম্প্রতিক তার কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে দলের ভেতরে গুঞ্জন রয়েছে। আর এর প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন পৌর নির্বাচনে।

গোলাম কিবরিয়া লিটন, আনিসুর রহমান এবং আনোয়ারুল হাসান উৎপল হুইপ আতিকের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। নারী সংসদ সদস্যের ভাই হওয়ায় এবং শ্রমিকের সন্তান হিসেবে শ্রমিক নেতা আরিফ রেজাও দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎরতা চালাচ্ছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন এবং নিজ নিজ বলয়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের আশীর্বাদ পেতে ঢাকা-শেরপুর দৌড়াচ্ছেন।

তবে এখনও ধোয়াশা কাটছে না দলীয় মনোনয়ন তৃণমূল ভোটে হবে, স্থানীয় নেতারা সিলেকশন দেবেন নাকি কেন্দ্র থেকে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে। সেজন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও একধরনের উৎকণ্ঠা কাজ করছে। নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, মেয়র পদে এবার দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এমনকি প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও সৃষ্টি হতে পারে। তবে জেলা আওযামী লীগের এক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, পৌর নির্বাচন এবং জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে ভেতরে ভেতরে নানা সমীকরণ চলছে। পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতদের জেলা আওয়ামী লীগে ভালো পদে বসানো হতে পারে।

প্রার্থী যেই হোক না কেন সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সাধারণ ভোটাররা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোট হলে শেরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিএনপি প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। শহরে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির দূর্বলতা থাকলেও মাঠপর্যায়ে ভোটের হিসেবে তাদের সমর্থন একেবারে কম নয়। এখানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়েরই প্রার্থী নির্বাচন সঠিক না হলে নিজেদের জন্য নিজেরাই আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।

শেরপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র হুমায়ুন কবীর রুমান বলেছেন, আমি আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে আরও একবার মেয়র হিসেবে পৌরবাসীর সেবা করতে চাই। আমার আমলে যত উন্নয়ন হয়েছে অন্য কোনো মেয়রের আমলে তা হয়নি। আশা করি দলীয় মনোনয়ন আমিই পাব।

সাবেক মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমি মনে করি আমার যা যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা তাতে দলীয় মনোনয়ন আমাকে দেয়া হবে। আমি শেরপুর পৌরসভাকে ডিজিটাল পৌরসভায় রূপান্তর করতে চাই। এজন্য আমার কর্মসূচি তুলে ধরে শহরে লিফলেটও বিতরণ করেছি। দল যোগ্য মনে করলে মনোনয়ন দেবে। আর যদি মনোনয়ন না পাই তবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবো।

সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও নবারুণ শিক্ষা পরিবারের পরিচালক আনোয়ারুল হাসান উৎপল অনেক আগে থেকেই ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শেরপুরকে একটি আধুনিক পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এটা কোনো কল্পকথা নয়, বাস্তবতা। সেজন্যই আমি পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। এক প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু আমি দল করি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার আমার সুযোগ নেই। মনোনয়ন না পেলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই থাকবো।

শিল্পপতি আনিসুর রহমান শেরপুরকে একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে পৌরবাসীর পাশে দাঁড়াতে দোয়া, সমর্থন ও ভোট প্রার্থনা করে লিফলেট আকারে শহরে চিঠি ছেড়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ তরুণ ব্যবসায়ী দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক সেটা মেনে নেবেন বলে উল্লেখ করেছেন।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক আশীষ বলেন, আমি সব সময় জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকবো। বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমি অবশ্যই দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো। আমি মাঠে থাকলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।

শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল বলেন, পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুসারে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।