ঠাকুরগাঁওয়ে ডানা মেলছে গরিবের স্বপ্ন
তানভীর হাসান তানু
‘সারাজীবন কাঁচা মাটি আগুনত পুড়ি হাঁড়ি-পাতিল বানাইছু, কিন্তু স্বপনেতও (স্বপ্নেও) ভাবি নাই-কাঁচা মাটি পুড়ি ইট বানেয়া পাকা বাড়িত থাকি বা পারিমো (থাকতে পারব)। দুইটা বেটিক বিহা (বিয়ে) দিবার পর আর সহায়-সম্বলও নাই। সেইতানে চিন্তা করা তো দূরের কথা এই বুড়া বয়সোত আসি পাকা বাড়িত শুতিবা পারিমো (ঘুমাতে পারব), সেইটা স্বপনেতও ভাবি নাই। কিন্তু সরকার এখন হামাক পাকা বাড়ি করি দিছে। এখন মনে হচে জীবনটা স্বার্থক।’
এভাবেই জাগো নিউজকে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া ৬৮ বছর বয়সী মৃৎশিল্পী যগেন চন্দ্র পাল। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের পালপাড়ার বাসিন্দা। চোখে-মুখে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাস।
স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে যগেন পালের অভাবের সংসার। সহায়-সম্বল বিক্রি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন অন্যের জায়গায় ঝুপড়িঘরে। সারাজীবন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। স্ত্রী ও নিজের জন্য দু-মুঠো আহার জোগাতেই হিমশিম খেতে হয়। শেষ জীবনে এক টুকরো জমি কিনে পাকা বাড়ি বানানোর কথা কখনই ভাবতে পারেননি তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের পাকা বাড়ি পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত যগেন পাল। সদর উপজেলার বদ্বেশ্বরী তলা ‘সোনালী স্বপ্নালয়ে’ তিনি পেয়েছেন একটি পাকাঘর।
একই পল্লীতে পাকাঘর পাওয়া আক্তার বানু জানান, প্রায় ২০ বছর আগে দিনমজুর শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর জমি না থাকায় এতোদিন অন্যের পুকুরপাড়ে ঝুপড়ি বানিয়ে বসবাস করেছেন তিনি। স্থায়ী ঠিকানার কথা ভাবতেই পারেননি। নিজের বাড়ি হবে, তাও আবার পাকাঘর এ যেন অধরা স্বপ্ন।
অতীতের দুর্বিষহ জীবনের গল্প বলতে বলতে চোখ দিলে জল গড়িয়ে পড়ে আক্তার বানুর। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘর দেবে এটা কখনও ভাবিনি। কীভাবে তার এ ঋণ শোধ করব তা বুঝে উঠতে পারছি না। সারাজীবন আল্লাহর কাছে শেখ হাসিনা আপার জন্য দোয়া করব।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচ উপজেলায় ৭৮৯ টি ঘর নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে ৩৩৩টি ঘর, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৮৫টি, রানীশংকৈল উপজেলায় ৭০টি, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৬৫টি এবং হরিপুর উপজেলায় ২৩৬টি।
সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউপি চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মন নির্মল জানান, যেসব ভূমিহীনকে পূনর্বাসন করা হচ্ছে তারা কোনোদিন এমন ঘর নির্মাণ করতে পারতেন না। সরকার তাদের পাকাঘর নির্মাণ করে দেয়ায় পরিবারগুলো সরকারের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সদর উপজেলায় ৩৩৩টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। জেলা প্রশাসক প্রথম থেকে কাজের মান তদারকি করে আসছেন। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়েছে এবং প্রত্যেক পরিবারকে দুই শতক জমি এবং তার উপর নির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জমি ও ঘর প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঠাকুরগাঁও জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন ৭ হাজার ৮০০ জন গৃহহীন রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এ জেলায় ৭৮৯ জনকে পাকাঘর দেয়া হচ্ছে। পূনর্বাসনে গৃহ নির্মান করা হয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী এসব ঘর হস্তান্তর করেছেন। উদ্বোধনের পরপরই ভূমির দলিলপত্র, কবুলিয়ত ও নামজারি ফরমসহ সব কিছু হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
এএএইচ/জিকেএস