ফেনীতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আ.লীগ-বিএনপি
জমে উঠেছে ফেনী পৌরসভার নির্বাচন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীদের নানা রকম প্রচারণায় সরগম এখন ফেনী শহর। লিফলেট বিতরণ, পোস্টার সাঁটানো, ব্যানার টাঙানো, গানে গানে তৈরি করা প্রার্থীদের প্রচারণার মাইকিং আর সভা সমাবেশে চতুর্দিকে নির্বাচনী আমেজ নেমে এসেছে।
সরকার দলীয় প্রার্থীরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বিএনপি ও অন্যন্য দলের প্রার্থীরাও নির্বাচিত হলে ফেনীকে মডেল পৌরসভায় রূপান্তরিত করা, নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ ও ভোটারদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে ভোটাররা জানিয়েছেন, সর্বাধিক বিশ্বস্ত, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিকেই ফেনী পৌরসভার মেয়র পদে তারা ভোট দেবেন। বিগত বছরগুলোতে ফেনীর স্থানীয় নির্বাচনে ভোট চুরি আর বিনাভোটে নির্বাচনের ইতিহাস ভেঙ্গে এবার নতুন করে ভোটারদের মাঝে উৎসাহ ও আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
মাঠ বিশ্লেষণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খুব আশাবাদী ভোটাররা। সবকিছু ঠিক থাকলে নৌকা ও ধানের শীষের দুজনই বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে রয়েছেন। এরা হচ্ছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। এর আগে তিনি ফেনী পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আলাল উদ্দিন আলাল। তিনি জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগেও তিনি ফেনী পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন।
এছাড়াও মাঠে প্রচার-প্রচারণায় থেমে নেই জাতীয় পার্টির নাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইয়ামিন হাসান ইমন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সিংহ প্রতীকের প্রার্থী তারিকুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী গোলামুর রহমান আজম।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যত প্রার্থীই থাকুক; ফেনীতে মূলত নৌকা ও ধানের শীষের মাঝেই লড়াই হবে। বর্তমান সরকারের সময়ে ফেনী পৌরসভায় মেয়র পদে নিজাম উদ্দিন হাজারী (বর্তমান এমপি) ও হাজী আলাউদ্দিনের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা প্রার্থী স্বপন মিয়াজীর পাল্লা ভারী রয়েছে। নবীণ রাজনৈতিক নেতা হলেও নতুন ভোটার ও যুবকদের জনপ্রিয়তাই তার বিজয়ের কারণ হতে পারে।
এদিকে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুসিত ফেনীতে সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি প্রার্থী আলালেরও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কম ভোটের ব্যাবধানেই নিশ্চিত হবেন ফেনী পৌরসভার আগামী দিনের মেয়র।
নৌকা প্রার্থী নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী জানান, ফেনী পৌরসভায় নির্বাচনের চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যে দিকেই যাচ্ছি ভোটারদের আবেগ উচ্ছ্বাস আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য ৩০ জানুয়ারির অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে ধানের শীষ প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল জানান, নানা বাধা বিপত্তির মাঝেও ফেনী পৌরসভায় আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। এখানে ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রশাসন ব্যার্থ হয়েছে। আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা হয়েছে। খাজুরিয়া রাস্তার মাথায় ২০টি মোটরসাইকেল যোগে সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকরা ধানের শীষের সবগুলো লিফলেট ছিঁড়ে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, ফলেশ্বর এলাকায় আমার ভোটার ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও সুযোগ পেলেই পরিবর্তনের জন্য ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করব।
নির্বাচন অফিস জানায়, ফেনী পৌরসভায় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১৮টি সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ৬টি মহিলা কাউন্সিলর পদের জন্য ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে ১০ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৫ জন মহিলা কাউন্সিলর একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি ১৮ ওয়ার্ডে মেয়র, ৮ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও ৩ ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ফেনী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, এবার ফেনী পৌরসভায় ৫ জন মেয়র, ৮ ওয়ার্ডে ২২ কাউন্সিলর ও ১টি ব্লকে দুজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফেনী পৌরসভায় ৯১ হাজার ৬৬২ জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৭ হাজার ৩০৭ জন পুরুষ ও ৪৪ হাজার ৩৫৫ জন মহিলা ভোটার।
এফএ/জেআইএম