বিবেকের তাড়নায় এসব বলছি : কাদের মির্জা
‘আমি খোদাকে হাজির-নাজির রেখে বলছি, আমি যা যা বলেছি, একটি পরিবর্তন আনার জন্য বলেছি। কারণ দেশতো এভাবে চলতে পারে না। কিছু কিছু নেতা আছে তারা মনে করেন, এ দেশ তাদের, এ দল (আওয়ামী লীগ) তাদের। তারা যা ইচ্ছা করবেন, সেভাবে দল চলবে।’
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরভবনে এক সাক্ষাৎকারে জাগো নিউজকে এসব বথা বলেন বসুরহাট পৌরসভার নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা।
নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারণা শেষে এক সভায় বিএনপি থেকে ধানের শীষে মেয়র পদে প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনা মির্জা কাদেরের বক্তব্যের সমালেচনা করেন বলেছেন, ‘তিনি সত্য বচন করেন কিন্তু তিনি কীভাবে বললেন, বিএনপির নেতার মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী তাকে এক কোটি টাকা দিয়েছেন ভোট করার জন্য এবং অস্ত্র দিয়েছেন? কী প্রমাণ আছে কাদের মির্জার কাছে?’
এ বিষয়ে আবদুল কাদের মির্জার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোক মাধ্যমে তিনি শুনেছেন। তার কাছে রির্পোট আছে। তাছাড়া নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ আযাদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপির ভালো সখ্যতা রয়েছে। এটি নোয়াখালীর সবাই জানে। তিনি বিএনপি নেতা। দিনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় না এসে রাত ১২টার পর কেন কামাল উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন? এ নিয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে। তারা কোথায় কোথায় বৈঠক করেছে তার তথ্যও তার কাছে রয়েছে। তাছাড়া কেউতো স্বীকার করবেন না তাদের কাছে অস্ত্র ও টাকা এসেছে।’
ভবিষ্যতে এ আসনের এমপি অথবা জাতীয় নেতা হওয়ার জন্য আপনার এ ধরনের বক্তব্য কি-না, জানতে চাইলে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। এমপি বা জাতীয় নেতা হওয়ার মতো আমার কোনো যোগ্যতায়ই নেই। সে মানসিকতাও রাখি না। আমি একজন কর্মী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাজ করে যেতে চাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা, শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা, ওবায়দুল কাদেরের উন্নয়নের কথা, মানুষের সুখ-দুঃখের কথা বলে যেতে চাই।’
অনেকেই মনে করছেন, একসঙ্গে থাকলে স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণেই আপনি দল ও নেতাদের সমালোচনা করছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে স্বার্থ যেখানে দ্বন্দ্ব সেখানে। কিন্তু আমার সঙ্গে এগুলোর কিছুই নেই। আমি আমার বিবেকের তাড়নায় এসব কথা বলছি। এ অনিয়ম-অব্যবস্থা দেশে চলতে পারে না। যখন যারাই ক্ষমতায় থাকে তারা মনে করে দেশের মালিক তারাই। এ ব্যবস্থা চলতে দেয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এজন্য এনে দেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে যারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে ক্ষমতা দখল করেছেন, তাদের আমল আর আমাদের আমল অনেক পার্থক্য আছে। তাদের রাজনীতি আর আমাদের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে। এসব কিছু বিবেচনায় আনা উচিত জাতীয় নেতৃবৃন্দের।’
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার এ বক্তব্যগুলোতে শেখ হাসিনা বিব্রত হওয়ার কানো কারণ নেই। কারণ আমি যা যা বলেছি সব সত্য বলেছি। শেখ হাসিনাই পারে এদেশে পরিবর্তন আনতে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়েছেন আর শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক মুক্তি, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তিনিই পারবেন অপরাজনীতি বন্ধ করতে, ভোট কারচুপি বন্ধ করতে। তিনি ছাড়া আর কেউ পারবেন না। কারণ কারো কোনো ক্ষমতাও নেই, অবস্থাও নেই।’
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এই মেয়রপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমি গত এক মাস ধরে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করতে গিয়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়েছি। ভোটের প্রচারণায় দেশের গান বাজিয়ে আমি ভোটারদের ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছি। আজ সকালেও ভোটারদের কাছে গিয়েছি। তবে আমি ভোটারদের কাছে যে সাড়া পেয়েছি, তাতে আশাবাদী আমি ইনশাল্লাহ আগামীকাল (শনিবার) ভোটে জয়ী হব। তারা আমার পক্ষেই রায় দেবে।’
মিজানুর রহমান/এসআর/জেআইএম