২৭ কোটি টাকার কাজের এ কী হাল!
লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় ইউজিআইআইপি-৩ এর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্প কাজের পদে পদে অনিয়মের ভাঁজ দেখা যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কনস্ট্রাকশন প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্প তদারকি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও কানে তুলছেন না ঠিকাদার। আর এতে ক্ষুদ্ধ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের।
এদিকে পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের লাহারকান্দি এলাকায় নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার ও পাইপের ওপর-নিচে সঠিকভাবে বালু না দেয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আঠা ছাড়া জোরপূর্বক (পিটিয়ে) পাইপের সংযোগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রতি কিলোমিটার এলাকার পাইপের দু’পাশ আটকে দিয়ে পানির গতি (প্রেসার টেস্ট) পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রতিটি পাইপের সংযোগ ছিঁড়ে গেছে।
কিন্তু পুনরায় আঠা ছাড়াই নিম্নমানের পাইপগুলোর সংযোগ লাগিয়ে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বাধা দিলে গত ১৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ করে প্রকল্পের অন্য এলাকায় চলে গেছেন ঠিকাদারের লোকজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় ২০১৯ সালে প্রায় ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দে ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের অধীনে ওয়াটার প্ল্যান্ট, পাইপ লাইন ও ওয়াটার প্রোডাকশনের কাজ শুরু হয়। কাজটি পেয়েছে এবিএম ওয়াটার কনস্ট্রাকশন। এর সত্ত্বাধিকারী এবিএম জাহিদুল ইসলাম।
প্রকল্পে ৬৮০ ঘনমিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াটার প্লান্ট, ৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন ও ৭টি ওয়াটার প্রোডাকশন স্থাপনের কাজ চলমান। আগামী মার্চের মধ্যে ঠিকাদারের পৌরসভাকে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদার জাহিদুল ইসলামের ভাই আহছান কবির পারভেজ কাজটি স্থানীয়ভাবে সমন্বয় করছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকদিন ধরে লাহারকান্দি, আবিরনগর, বাঞ্চানগর এলাকায় পৌরসভার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গত নভেম্বরে লাহারকান্দি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির নতুন পাইপ লাইনের কাজ শুরু হয়। নিয়ম না মেনে প্রতিটি পাইপ আঠা ছাড়া সংযোগ দেয়া হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে পাইপ লাইনে পানির গতি (প্রেসার টেস্ট) পরীক্ষা করা হয়। এতে পাইপের প্রতিটি সংযোগ ছিঁড়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ফের একইভাবে পাইপগুলো বসায়।
এলাকাবাসী বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পানির গতি পরীক্ষার সময় আবিরনগর ও লাহারকান্দি এলাকার পুরাতন লাইনও ছিঁড়ে গেছে। এ জন্য স্থানীয়রা পৌরসভার বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না।
গত বুধবার (৬ জানুয়ারি) বক্স করার জন্য দুইজন নির্মাণ শ্রমিক পাঠানো হয়। সেখানে ঠিকাদারের সমন্বয়ক বা তদারকি সংশ্লিষ্ট কাউকে দেখা যায়নি। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ম না মেনে পাইপ জোড়া দিয়ে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার সুপার সামছু উদ্দিন সামছু জানিয়েছেন, ঠিকাদার কারো কথা শোনে না। তিনি ইচ্ছেমতো লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। তার (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে দুদকে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।
প্রকল্প কনসালটেন্ট ইয়াছিনুর রহমান বলেন, পানির গতি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী ৬ ভার লোড দিয়ে ৭২ ঘণ্টা ধরে রাখার কথা রয়েছে। কিন্তু ৪ ভার লোড দিলেই পাইপের সংযোগগুলো ছিদ্র হয়ে পানিতে এলাকা ভেসে যায়। এতে কাজ বন্ধ রাখা হয়। এখানে এবিএম ওয়াটার কনস্ট্রাকশনের যথেষ্ট যন্ত্রপাতি নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও অকেজো।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা এ প্রকল্পটির সহযোগী হিসেবে কাজ করছি। সরাসরি তদারকি করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে পানির গতি পরীক্ষা ছাড়া কাজটি বুঝে নেয়া হবে না।
এদিকে এবিএম কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক আহছান কবির পারভেজ বলেন, প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান। ফেব্রুয়ারিতেই কাজ বুঝিয়ে দেয়া যাবে। পাইপলাইনে সমস্যা নিয়ে কিছু অভিযোগ রয়েছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেই সঠিকভাবে কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হবে। আগামী মার্চের মধ্যেই পৌরবাসী এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সচিব মো. আলাউদ্দিন বলেন, পানির গতি পরীক্ষা করেই কাজ বুঝে নেয়া হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে মেয়র কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাদের কার্যক্রমে মেয়র বর্তমানে ক্ষুদ্ধ।
কাজল কায়েস/এফএ/জেআইএম