চর কেটে বালু বাণিজ্যে আ.লীগ-বিএনপি নেতারা একাট্টা
১৫ বছর আগে যমুনায় বিলীন হয়ে যায় ফরিদ উদ্দিনের বসতভিটা। সাত সদস্যর পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন যমুনা পাড়ের রঘুনাথপুর গ্রামে। সেখানেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
হারানো জমিজমা গেল বছর জেগে উঠেছে যমুনা বুকে। এই চরের নাম ‘রাধানগর’। জেগে ওঠা ওই চরের জমিতে বসতবাড়ি তৈরি ও চরের জমিতে চাষাবাদের স্বপ্ন দেখেন বাস্তুহারা ফরিদ।
ফরিদ উদ্দিন একা নয়, তার মতোই বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর বৈশাখী ও রাধারনগর চরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন হটু মণ্ডল, সামাদ মণ্ডল, আলী আহম্মেদ, মাসুদ রানা ও আব্দুর রশিদকসহ বাস্তুহারা শতাধিক পরিবার। কিন্ত বাস্তুহারাদের সেই স্বপ্ন বালুদস্যুদের থাবায় ম্লান হয়ে যাচ্ছে। পুরানো সেই ভিটায় তারা মাথা গোঁজার ঠাই করতে পারছেন না। প্রশাসনও শুনছে না তাদের কান্না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যমুনা নদীর পূর্বদিকে জেগে উঠেছে বৈশাখী ও রাধানগর চর। ওই চর বসবাস ও চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠেছে। তবে সেই চর থেকে অবৈধভাবে বালু কেটে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। দিনে বালু উত্তোলন করা হয় কম। তবে রাতে বালু তোলা যন্ত্রের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ওই চর থেকে বালু তুলে নেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া এলাকায়। সেখান থেকে ট্রাকযোগে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর বালুদস্যুরা এ কাজটি করছে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই।
অভিযোগ রয়েছে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত আলী, শহিদুল ইসলাম, ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান, সদস্য ভুলু সরকার ও গোসাইবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম আলু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতে রয়েছেন। এছাড়া যমুনার চর থেকে বালু উত্তোলনের নেপথ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নাম রয়েছে।
বৈশাখী ও রাধানগর চরের আলী আহম্মেদ, মাসুদ, আব্দুর রশিদ, হটু মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন জানান, চর কেটে বালু তোলায় চাষাবাদ ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তারা বলছেন, চরে বালু তোলার বিরূপ প্রভাব এখনই বোঝা যাবে না। তবে বেপরোয়াভাবে বালু তোলার কারণে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনে পুরো চরই নদীতে বিলীন হবে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, চর থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ঘুরেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
বালু উত্তোলনকারী আওয়ামী লীগ নেতা হযরত আলী ও বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান স্বীকার করেন যে, চর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য সরকারিভাবে কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। তারা জানান, স্থানীয় বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই বালু তোলা হচ্ছে। তবে এই বালু উত্তোলনের ফলে চরের কোনো ক্ষতি হবে না।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলন করলে যমুনার চর ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ‘যমুনার চর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়েছি। দাফতরিক কাজের ব্যস্ততার কারণে সেখানে যেতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে দু-একদিনের মধ্যে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসআর/এমকেএইচ