বাহে এক নদী হামার দুইবার বাড়ি ভাঙিল


প্রকাশিত: ০৯:১৯ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

‘বাহে এক নদী হামার দুইবার বাড়ি ভাঙিল। শ্যাষ সম্বল বাড়িভিটাও গিলি খাবার নাগছে। তোমরা ছবি তুলি কী করবেন? হামরাতো ফকির হয়া গেলং।’ এমন আক্ষেপের কথা জানালেন নব্বই বছরের বৃদ্ধ জসমত আলী। কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের খামার রসুলপুর গ্রাম এখন আতঙ্কের জনপদ। গত কয়েকদিন থেকে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে দুধকুমর নদী।

এই গ্রামের আইউব আলী, আব্দুল হক, ইয়েরখা, ইছব আলী ও সদরেদজ্জামাল সর্বনাশা ভাঙনে ভিটাহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের প্রতিবেশীদের চোখমুখ এখন অন্ধকারে ঢাকা। কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। শুধু প্রতিশ্রুতির কথা শুনতে শুনতে দেড় মাস কেটে গেছে।

বর্তমানে ভাঙন কবলিত লোকজন ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে বাড়ি সরানোর কাজে ব্যস্ত। এমন করুণ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙাবে কে? কে ঠেকাবে এই প্রলয়ঙ্করী ভাঙন।

সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পূর্বে ভাঙন কবলিত ঘোগাদহের খামার রসুলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল অসহায় মানুষের আর্তি। এই গ্রামে বিগত দুই বছর ধরে ভাঙন চলছে। ইতোমধ্যে মেইন ল্যান্ডের দুই কিলোমিটার জুড়ে শতশত একর আবাদি জমি ও বসতবাড়ি নদী গ্রাস করে নিয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন ভাঙনের তীব্রতা কমে গেলেও গত দেড়মাস থেকে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল পায়নি। ফলে ভাঙন কবলিতরা ক্ষুব্ধ। তারা জানালেন, নিজেদের অসহায়ত্বের কথা। এ নিয়ে এখানেই দুবার ভাঙনের শিকার হয়েছে তারা। এখন নিজস্ব কোন জমি নেই। কোথায় উঠবে ভেবে কূল পাচ্ছেন না।

ওয়াপদা বাঁধের স্লাপে ইতোমধ্যেই আগে যারা ভাঙনের কবলে পড়েছে, তারা দখল করে নিয়েছে। এখানে এখন এক ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা নেই। ফলে আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে না ভাঙন কবলিতরা।

দুধকুমর নদী তীরবর্তী ভাঙন কবলিত ভৈষেরকুটি, খামার, খামার রসুলপুর ও বৃহত্তর গ্রামের লোকজন অভিযোগ করেন, গত দুবছর ধরে এই এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। ফলে ভাঙন হলে হৈচৈ শুরু হয়। শুকনো মৌসুমে তা থেমে যায়। বরাদ্দের অজুহাতে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। তার অস্থায়ী নয় স্থায়ী কাজ চান। এই এলাকায় উত্তরে স্লুইচ গেট থেকে দক্ষিণে আইয়ুবের বাড়ি পর্যন্ত তারা ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।  

এই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মেম্বার তবিজন বিবি জানালেন, দুধকুমর নদী বর্তমানে ঘোগাদহ ইউপি প্রতিরক্ষা বাঁধ থেকে মাত্র ২০ ফিট কাছে চলে এসেছে। বাঁধের পাশে শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। এই গ্রামের আবুল হোসেন, মতিয়ার, মান্নান, নুরু, আব্দুল করিম, বাবলু, ভানুমুন্সি, কাশেম, নুর হোসেন, বাংটু, বানভাসা, বাহেরউদ্দিন, কাজু, নজরুল, বারেক চকিদার, ছালাম, আবু কালাম, হারুন, কাশেম, আজিজুল, তাইজুল, আমিনুল, জোবে, ফজেল, তাইজুল ও আজিজুলসহ মাঝিপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙন ঝুকিতে রয়েছে। তারা পর্যায়ক্রমে বাড়ি ভিটা সরানোর কাজ করছেন। দু:খজনক হলেও সত্যি তাদের নিজন্ব কোনো জমি নেই। ফলে এরা মাতববরদের ধরেও আশ্রয় নেয়ার জায়গা পাচ্ছেন না তারা।

ঘোগাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মাস্টার জাগো নিউজকে জানান, বিগত দুবছর ধরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে এই জায়গায় ৫ শতাধিক মিটারব্যাপী ভাঙন চলমান রয়েছে। বর্তমানে ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যেকোনো মূহুর্তে ওয়াপদা বাঁধ ওয়াশ আউট হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরো জানালেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে লিমিটেশন আকারে কাজ হাতে নিচ্ছে বলে জেনেছি। যা এই ভাঙন ঠেকাতে এক বালতি পানির মধ্যে এক মুঠো বালু ফেলার মতো অবস্থা হবে। এখানকার জনপদ বাঁচাতে ব্যাপকহারে কাজ হাতে নেয়া দরকার।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, জরুরি কাজের আওতায় ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও টেক্সটাইল ও জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে ১৫ লক্ষ টাকার বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে খুব দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা সম্পর্কে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তরাঞ্চল) আতিকুর রহমান জানান, আপাতত কুড়িগ্রামের ঘোগাদহে ভাঙন প্রতিরোধের জন্য জরুরি কাজের আওতায় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।