এক চোর শনাক্ত করতে পুলিশকে ঘাঁটতে হলো ১৫ হাজার কললিস্ট
বরিশালে প্রায় ১৫ হাজার ফোন নম্বর যাচাই-বাছাই করে জুয়েলারি দোকানের এক স্বর্ণালংকার চোরকে গ্রেফতারের পর একে একে বেরিয়ে এলো পুরো চোরচক্র। জুয়েলারি দোকানে চুরি সংঘঠিত হওয়ার দিন আশপাশের মোবাইল ফোনের টাওয়ারের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে আসা-যাওয়া কলের তালিকা যাচাই-বাছাই করে এক চোরকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চক্রের আরও আট জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি হওয়া স্বর্ণের একটি নেকলেস ও ৯টি আংটি।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-বরিশালের সদর উপজেলার মো. সুমন (৩৭), কুমিল্লার তিতাস এলাকার মো. অলি (৩০), মুরাদনগর এলাকার মো. আলাউদ্দিন (২৫), একই এলাকার মো. হাসান (১৭), দেবীদ্বার এলাকার মো. জামাল (৪০), চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার মো. লিটন (২৮), চাঁদপুরের কচুয়া এলাকার জসিম ওরফে জনি (২৮), লক্ষ্মীপুরের মো. শুক্কুর (২০) ও নারায়ণগঞ্জের মো. নয়ন (২২)।
তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাদপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। চক্রটির নেতা বরিশালের সদর উপজেলার মো. সুমন।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর আমতলা মোড় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ১৯ মার্চ বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম কাঠপট্টি এলাকার আশ্রাব অ্যান্ড সন্স নামের একটি জুয়েলারি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। ওইদিন দুপুরে জুয়েলারি দোকান বন্ধ করে খাবার খেতে বাসায় যান মালিক বাচ্চু তালুকদার। এ সময় সংঘবদ্ধ চোরচক্রটি ব্যস্ততম রাস্তার পাশে লুঙ্গি এবং বিছানার চাদর মেলে ধরে শাটার ও কলাপসিবল গেটের তালা কেটে ভেতরে ঢোকেন। এরপর মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে ১২৬ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোরচক্রটি।
ওইদিনই জুয়েলারি মালিক বাচ্চু তালুকদার অজ্ঞাতদের আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে জুয়েলারি দোকানের সামনে এবং ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে। এতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক দোকানের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানতে না পারায় চক্রটির সদস্যদের গ্রেফতারে বিলম্ব ও তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছিল না। অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রাসেলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল টানা ৯ দিন বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দলনেতাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রাসেল জানান, ১৯ মার্চ দুপুরে বাচ্চু তালুকদারের জুয়েলারি দোকান আশ্রাব অ্যান্ড সন্সে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই দোকানের ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে কয়েকজন যুবককে দোকানের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাাফেরা করতে দেখা যায়। এটা বাদে চুরির ঘটনা উদঘাটনে আর কোনো ক্লুই পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন দোকানের আশপাশের মোবাইল ফোনের টাওয়ারের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে আসা-যাওয়া কলের তালিকা অপারেটরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এরপর প্রায় ১৫ হাজার ফোন নম্বরের তালিকা যাচাই-বাছাই করে চোর চক্রের সদস্য মো. লিটনের নম্বর নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে জানা যায়, লিটন চট্টগ্রামের হালিশহরে অবস্থান করছেন।
৯ দিন আগে ছদ্মবেশে হালিশহরের মাদকাসক্ত একটি নিরাময় কেন্দ্র থেকে লিটনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যমতে ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে চক্রের দলনেতা সুমনসহ আরও আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় চুরি হওয়া স্বর্ণের একটি নেকলেস ও ৯টি আংটি।
সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রাসেল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা চুরির কথা স্বীকার করেছেন। তাদের আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।
সাইফ আমীন/এসআর/জেআইএম