‘দুই মোটরসাইকেলে আসা ৫ দুর্বৃত্ত ভাঙচুর করে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৯:২৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

অডিও শুনুন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়া মহা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। মহাবিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দুটি মোটরসাইকেলে আসা পাঁচ দুর্বৃত্ত মহান এই বিপ্লবীর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আর কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কয়া মহাবিদ্যালয়ের নাইট গার্ড খলিলুর রহমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচ দুর্বৃত্ত ভাস্কর্য ভেঙে পালিয়ে যায়। তিনি বিষয়টি দেখতে পেয়ে অধ্যক্ষ হারুনার রশিদকে জানান। কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যান।

পরদিন (শুক্রবার) বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়রা দেখতে পান বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের মুখের ডান পাশের চোয়াল এবং নাকের পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে কুমারখালীসহ কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকদিন আগে (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, কলেজ কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নু, কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভপতি আনিসুর রহমান এবং নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমানকে আটক করেছে।

ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুষ্টিয়া জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার বিকেলে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুমারখালী শাখা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি এটি এম আবুল মনছুর মজনু, সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি কুমারখালী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহসান বরুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হোসেন মানু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, কলেজ অধ্যক্ষের অবহেলার কারণেই ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

কুমারখালী ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম আবুল মনছুর মজনু বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আজ এই সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, পুলিশ এই ঘটনার পেছনে দোষীদের খুঁজে বের করবে সেই আশা করছি।’

জেলা পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানান, ‘বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনা পেছনে সব রহস্য উন্মোচন করা হবে। পুলিশের একাধিক টিম এ ঘটনার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।’

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, ‘যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা,তারা এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিনি ‘বাঘা যতীন’ নামেই সবার কাছে সমধিক পরিচিত। তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। তার জন্ম ১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানায়। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯১৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কয়া মহাবিদ্যালয়ের সামনে ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়।

আল-মামুন সাগর/এসএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।