সমঝোতা ঠেকাতে কীটনাশক পান করা লাগলো ধর্ষিতাকে
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে ধর্ষণের মামলা সমঝোতার খবর শুনে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ধর্ষণের শিকার কিশোরী। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ধর্ষণে অভিযুক্ত আইনজীবী হাবিবুর রহমান (৩০) বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। তার পক্ষে সমঝোতার প্রস্তাবকারীদের চাপে বিপাকে পড়েছে পরিবারটি।
এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রতন বিলাস বর্মন ও আটোয়ারী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনোজ রায় হিরুর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা ও ভুক্তভোগী পরিবার থেকে জানা যায়, ধর্ষণের মামলা হওয়ার পর থেকেই অভিযুক্ত আইনজীবী হাবিবুর রহমান কারাগারে থাকলেও তার পরিবার বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে সমঝোতার জন্য চাপ শুরু করেন। সর্বশেষ প্রায় সাত লাখ টাকায় মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকেন ইউপি সদস্য রতন বিলাস বর্মন ও মনোজ রায় হিরু। তারা সমঝোতার কাগজপত্রও তৈরি করেন।
এমন খবর শুনে রোববার রাতে ওই কিশোরী বাড়িতে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকার জুতা মেরামতকারী (মুচি) সূশীল চন্দ্র দাসের বাড়িতে নিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হাবিবুর রহমান। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে দেয়।
ওইদিন রাতেই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে আইনজীবী হাবিবুর রহমান ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে আটোয়ারী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
কিশোরীর বাবা বলেন, ইউপি সদস্য রতন বিলাস বর্মন ও মনোজ রায় হিরু প্রায় দুই মাস ধরে আমাকে মামলা তুলে সমঝোতার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তারা সাত লাখ টাকা দিতে চেয়েছেন। সমঝোতার সব কাগজপত্রও তৈরি করেন। এই খবর শুনে রোববার রাতে আমার মেয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এজন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে আবারও থানায় মামলা করেছি।
আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, ওই কিশোরী কীটনাশক পান করেছিল। হাসপাতালের আনার পর তাকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল। তবে ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আটোয়ারী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনোজ রায় হিরু বলেন, আমি ওই কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছি। এখন আমাকেই এই এ ঘটনায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কিছুই জানি না। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ধর্ষণের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণও মিলেছে। বর্তমানে অভিযুক্ত আইনজীবী জেলহাজতে রয়েছেন। ওই কিশোরীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় আরও একটি আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সফিকুল আলম/এফএ/জেআইএম